আফগানিস্তানে ফের ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তালিবান মুখপাত্র বলেছেন, আফগানিস্তানের পশ্চিমে শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় ২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। পশ্চিম আফগানিস্তানের ইরান সীমান্তের কাছে ঘটে যাওয়া এই শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরও বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপা হয়েছে ৬.৩।
অনেক গ্রাম ধ্বংস হয়েছে ভূমিকম্প হেরাত শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) দূরে অনেক গ্রাম ধ্বংস করেছে। অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকে আছে। অন্তত তিনটি শক্তিশালী কম্পন মানুষ অনুভব করেছে। জীবিতরা ভয়ঙ্কর দৃশ্য বর্ণনা করেছে কারণ অফিস ভবনগুলি প্রথমে কেঁপে ওঠে - এবং তারপরে তাদের চারপাশে ধসে পড়ে।
ভূমিকম্পে অনেক গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক মানুষ আটকে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটকে থাকা লোকজনকে উদ্ধারে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।
গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশের রাজধানী থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। পরে আরও আটটি শক্তিশালী পরাঘাত (আফটার শক) হয়।
ভূমিকম্পে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার বাড়িঘর ধসে পড়ে। শহুরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। আতঙ্কিত লোকজন সড়কে নেমে আসেন। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র আজ স্পষ্ট হতে শুরু করে। প্রাদেশিক সরকারের উপমুখপাত্র বিলাল করিমি আজ সকালের দিকে বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, হতাহতের সংখ্যা বাস্তবে অনেক বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, হেরাত প্রদেশের অন্তত ১২ গ্রামে ৬০০টির বেশি বাড়ি ধ্বংস বা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ২০০ জন।
গতকাল গভীর রাতে ডব্লিউএইচও অবশ্য বলেছিল, তল্লাশি-উদ্ধার অভিযান চলমান থাকায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় ৪২ বছর বয়সী বশির আহমেদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনিতেই সব ঘরবাড়ি ধসে যায়। যাঁরা ঘরের ভেতরে ছিলেন, তাঁরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন। এমন অনেক পরিবার আছে, যাদের অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই।
নেক মোহাম্মদ নামের এক যুবক এএফপিকে বলেন, বেলা ১১টার দিকে প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সে সময় তিনি কর্মস্থলে ছিলেন। পরে তিনি বাড়িতে ফেরেন। দেখতে পান, ঘরবাড়ির কিছুই আর টিকে নেই। সবকিছু বালির সঙ্গে মিশে গেছে। তাঁর বাড়ি যে এলাকায়, সেখান থেকে প্রায় ৩০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রথম ভূমিকম্পটি অনুভূত হলে হেরাত শহরের অনেক বাসিন্দা বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। স্কুল, হাসপাতাল ও অফিস খালি হয়ে যায়। ভূমিকম্পে মেট্রোপলিটন এলাকায় হতাহতের কিছু খবর পাওয়া গেছে।
২০২১ সালে তালেবান দেশটির ক্ষমতায় ফেরে। তালেবানের ক্ষমতায় ফেরার পর দেশটিতে বিদেশি সাহায্য ব্যাপকভাবে প্রত্যাহার করা হয়। এতে আফগানিস্তান একটি ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়ে। এর মধ্যে এখন দেশটিতে ভূমিকম্পে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হলো।
ইরানের সীমান্তবর্তী হেরাত প্রদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ। এলাকাটি এমনিতেই খরার শিকার। এই খরা ইতিমধ্যে প্রদেশটির কৃষিনির্ভর সম্প্রদায়কে পঙ্গু করে দিয়েছে। আফগানিস্তানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। গত বছরের জুনে দেশটিতে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়। এতে ১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
দেশটির তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের মুখপাত্র আবদুল ওয়াহিদ রায়ান বলেছেন, হেরাতে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি। অবিলম্বে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ছয়টি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে এবং শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। একটি আপডেটে বলা হয়েছে ৪৬৫টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং ১৩৫টি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ভূমিকম্পের তিনটি আফটারশক দুর্যোগ কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জান বলেছেন যে হেরাত প্রদেশের জেন্দা জান জেলার চারটি গ্রাম ভূমিকম্প এবং এর আফটারশকগুলিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে যে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল হেরাত শহরের প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এর পরে তিনটি খুব শক্তিশালী আফটারশক হয়েছিল, যার তীব্রতা ছিল ৬.৩, ৫.৯ এবং ৫.৫, এর সাথে কম আফটারশকও হয়েছিল। এক ব্যক্তি বলেন, “বাড়ি, অফিস, দোকানপাট সব খালি এবং আরও ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। আমি এবং আমার পরিবার আমাদের বাড়ির ভিতরে ছিলাম যখন আমি ভূমিকম্প অনুভব করি। আমার পরিবার চিৎকার শুরু করে এবং ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আফগান হতাহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেন্দা জানের কাছে ১২টি অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের দল হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা এবং অতিরিক্ত প্রয়োজন মূল্যায়নে সহায়তা করছে।