মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমন।-ফাইল ছবিমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমন (এমবিএস) আগামী সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে চলেছেন। গাজা যুদ্ধবিরতির পর মধ্যপ্রাচ্যের নতুন কূটনৈতিক সমীকরণে এই বৈঠককে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগেই দুই নেতার সাম্প্রতিক ফোনালাপ নিয়ে মার্কিনমাধ্যমে যে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, তা আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
গাজা যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্পের সরাসরি বার্তা
মার্কিন সংবাদমাধ্যম Axios-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৩ অক্টোবর শার্ম আল শেখ শান্তি সম্মেলনের পর ট্রাম্প ফোনে এমবিএসকে জানান যে, তিনি গাজার যুদ্ধ থামাতে 'সফল' হয়েছেন। এরপরই তিনি সৌদি আরবকে ইজরায়েল সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্কের দিকে এগোতে আহ্বান জানান।
একজন প্রবীণ মার্কিন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প সরাসরি বলেন, 'তোমরা যা চেয়েছিলে সব দিয়েছি। এখন প্রেসিডেন্ট চান, তোমরা ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করো।' এমবিএস জানান, তিনি আলোচনার দরজা খোলা রাখতে চান এবং এই বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।
কেন আটকে আছে স্বাভাবিকীকরণ?
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধের আগে সৌদি-ইজরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে ‘সময়ের অপেক্ষা’ বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সৌদি আরবে ইজরায়েলবিরোধী জনমত তীব্র আকার নেয়।
এমবিএস স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথ পরিষ্কার না হলে সৌদি আরব কোনওভাবে ইজরায়েল সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক করবে না। কিন্তু ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আবার প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের কট্টর বিরোধী। ফলে আলোচনার পথ জটিল হয়ে পড়েছে।
ট্রাম্পের প্রস্তাব: অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ?
ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট রূপরেখা নেই। শুধু বলা হয়েছে, প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষের সংস্কার এবং নিরস্ত্রীকৃত গাজা উপত্যকার পুনর্গঠন শুরু হলে 'প্যালেস্তাইন আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রের একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ' তৈরি হতে পারে। এই অস্পষ্টতা সৌদি রাজতন্ত্রের জন্য যথেষ্ট নয়, বলে জানিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দাদের একটি অংশ।
সৌদির ভেতরে ইজরায়েলবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি
গাজা যুদ্ধের পর সৌদি জনমনে ইজরায়েলবিরোধী ভাবনা প্রবল হয়েছে। সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ এক প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, 'এমবিএস যদি সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে এগোতে চান, ইজরায়েলকে প্রথমে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র নিয়ে দৃঢ় আশ্বাস দিতে হবে।'
হোয়াইট হাউসে উচ্চ-প্রোফাইল বৈঠক
আগামী সপ্তাহে ট্রাম্প ও এমবিএসের বৈঠককে কেন্দ্র করে কূটনীতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে। সৌদি কর্মকর্তারা চান, প্রতিরক্ষা চুক্তি, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও বিনিয়োগই হোক আলোচনার মূল বিষয়। কিন্তু তারা উদ্বিগ্ন যে, ইজরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চাপ বৈঠকের এজেন্ডাকে প্রভাবিত করে দিতে পারে।
এগোবে কি মধ্যপ্রাচ্যের ‘মেগা চুক্তি’?
সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের সরাসরি চাপ, সৌদির শর্ত, ইজরায়েলের অনমনীয়তা এবং গাজার অস্থিরতা-এই চারটি উপাদানই পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।