দ্রুত বদলাচ্ছে গ্লোবাল টেক ইন্ডাস্ট্রি। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলাচ্ছে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরতদের জীবন। রাতারাতি রোজগার হারাচ্ছেন অসংখ্য কর্মী। ভারতেও এর বড় প্রভাব পড়ছে। ২০২৫ সালটি টেক ইন্ডাস্ট্রির জন্য মোটে ভাল কাটেনি। দেশের আইটি সংস্থাগুলিই এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। টেকনোলজি বিশেষজ্ঞরাও চাকরি খোয়াচ্ছেন ভারতের বাজারে।
নিয়োগ নেই, চলছে ছাঁটাই
২০২৫ সালকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ভবিষ্যতের শুরু ধরা হচ্ছিল। কিন্তু সেই সালই প্রযুক্তি কর্মীদের জন্য গভীর অনিশ্চয়তার বছর হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত ১৭৬টি কোম্পানি থেকে ৮০ হাজারেরও বেশি কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন, যা মহামারির পর থেকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অন্যতম বড় কর্মীসংকোচন হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
ভারতের আইটি সেক্টরে বাড়ছে চাপ
ভারতের আইটি সেক্টরে কাজ করা কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৭৩ লক্ষ।
ইন্টেল: ছাঁটাই হয়েছে ২৫ হাজার কর্মী, যা মোট ওয়ার্কফোর্সের ২৫ শতাংশ।
মাইক্রোসফ্ট: ছাঁটাই হয়েছেন ১৫ হাজার কর্মী।
টিসিএস: ছাঁটাই হয়েছেন ১২ হাজার কর্মী। জানানো হয় তাঁরা স্কিল ম্যানেজমেন্টে অক্ষম।
মেটা, গুগল, অ্যামাজন: ২০ থেকে ২৫ হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন। বৃহত্তর ক্ষেত্রে পুনর্গঠণের কারণ দেখানো হয়েছে তাঁদের।
ক্ল্যাভিও: চলতি বছর জুলাই-অগাস্টের মধ্য ২০ শতাংশ কর্মী ছাটাই করা হয়েছে।
রেড হ্যাট: প্রায় ৮০০ কর্মী ছাটাই।
কিউরোভো সেমিকন্ডাক্টর্স: ২৫০ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে।
সেলসফোর্স, সিসকো, ওরাকেল: নির্দিষ্ট সংখ্যা না জানালেও প্রচুর কর্মীকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ ধরানো হয়েছে রাতারাতি।
স্টার্ট আপ: কাজ হারিয়েছেন ৫ থেকে ৮ হাজার কর্মী।
AI কেন্দ্রিক পুনর্গঠণ
অর্থনৈতিক চাপ এবং পুনর্গঠণের প্রয়োজনে ছাঁটাই হচ্ছে বটে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর নেপথ্যে মূল কারণ AI-এর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার। নিয়মিত বহু কাজ দ্রুত এবং স্বয়ংক্রিয় হয়ে পড়েছে AI-এর দৌলতে, ফলে হাজারো কর্মী চাকরি হারাচ্ছেন।
শুধু আমেরিকাতেই এবছর শিল্পক্ষেত্রে ৭ লক্ষ ৪০ হাজারের বেশি চাকরি চলে গিয়েছে। যা মহামারির পর সর্বোচ্চ এবং তার একটি বড় অংশ আইটি সেক্টরের। ভারতে একই প্রভাব পড়েছে। জানা গিয়েছে, ৫৭% কর্মীকে ইমেইল বা ফোনকলের মাধ্যমে জানানো হয়েছে তাঁদের আর চাকরি নেই। ট্রানজিশনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল মাত্র কয়েক সপ্তাহ।
শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধাক্কা নতুন দক্ষতার চাহিদার যুগকে ত্বরান্বিত করবে। AI ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেটা সায়েন্স, সাইবার নিরাপত্তা ও ডেভঅপস–এর মতো সেক্টরে দ্রুত কর্মসংস্থান বাড়বে। অথচ ঐতিহ্যবাহী সফটওয়্যার কাজগুলির ক্ষেত্র ক্রমেই সংকুচিত হবে।
অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও কর্মীসংখ্যা পর্যালোচনা করছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, ২০২৫ সালে বিশব্যাপী কর্মী ছাঁটাইয়ের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে AI বিপ্লবের মানবিক মূল্য দিন দিন উপেক্ষা করা অসম্ভব হয়ে উঠছে।
এক্ষেত্রে কর্মীদের জন্য একটি বার্তা স্পষ্ট। দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে হবে, নইলে পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি অনিবার্য।