অশান্ত নেপালে একটি ছবিকে কেন্দ্র করে নতুন করে তৈরি হল বিতর্ক। জেন জি বিক্ষোভের চাপ শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। এরপর অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন নেপালের সেনাপ্রধান অশোকরাজ সিগডেল। কিন্তু, সে বার্তার সময়ে সকলেরই নজর পড়েছে তাঁর পিছনে থাকা পৃথ্বী নারায়ণ শাহের ছবিতে। তারপর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, পিছনে হিন্দু রাজার ছবি কেন? আদতে কী বার্তা দিতে চাইছে নেপাল?
কেউ বলছেন, 'এই ছবির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নেপালের ভবিষ্যৎ।' কারও আবার দাবি, 'নেপালে রাজতন্ত্র ফিরতে চলেছে।' এক কদম এগিয়ে এই ভাইরাল ছবি নিয়ে নেটপাড়ায় চর্চা শুরু হয়েছে, 'নেপালের হিন্দুরাষ্ট্র হওয়া তবে কি এবার সময়ের অপেক্ষা মাত্র?'
পৃথ্বী শাহ কে?
নেপালে একটা সময়ে ছিল রাজতন্ত্র। শাসন করতেন শাহ বংশের রাজারা। ২০০৮ সালের বামপন্থী আন্দোলনের হাত ধরে সেখানে রাজতন্ত্রের অবসান হয়। তবে সাধারণ মানুষ ভগবান তুল্য মনে করছেন পৃথ্বী নারায়াণ শাহকে। তিনি নেপালের একতা, আত্মমর্যাদা এবং সামরিক
শক্তি মজবুত করেছিলেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি নেপালের সিংহাসনে বসেছিলেন। ধর্মপ্রাণ হিন্দু ছিলেন তিনি। গড়ে তুলেছিলেন অখণ্ড নেপাল। ভারতে সে সময়ে ব্রিটিশ রাজত্ব ছিল। সেই ব্রিটিশদের হাত থেকে নেপালকে বাঁচাতে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিলেন এই রাজা। তাঁর যুদ্ধনীতি, গেরিলা যুদ্ধের কৌশল আর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে ভর করেই গড়ে উঠেছে আজকের গোর্খা বাহিনী।
বড় ইঙ্গিত
এই পৃথ্বী নারায়ণ শাহের স্মরণে তাঁর নামে অজস্ত্র প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে নেপালে। রয়েছে সেনা হাসপাতাল, ব্যারাকও। এই রাজার ছবির সামনেই সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন অশোকরাজ সিগডেল। আবার অশান্ত নেপালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময়েও তাঁর পিছনে দেখা গেল সেই রাজার ছবিই। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মহল মনে করছে, এমনটা কোনও মতেই কাকতালীয় হতে পারে না। বরং এই ছবি ভবিষ্যতে নেপালে কী হতে চলেছে, তার একটা কোনও ইঙ্গিত।
রাজতন্ত্র
রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের জেরে নেপাল থেকে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটেছিল। ফেসবুক, এক্স, ইউটিউব সহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই নেপাল জ্বলছে। সে সময়েই শোনা গিয়েছিল, রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবি নিয়ে এবার পথে নামবে নেপালের জনতা। এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন মাওবাদী নেতা দুর্গা প্রসাইয়ের মন্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, 'রাজতন্ত্র ফিরুক। নেপাল আবার হিন্দুরাষ্ট্র হোক।'