প্রতীকী ছবি চিনা বিজ্ঞানী এমন একটি ট্যাবলেট তৈরি করছেন যাতে মানুষের আয়ু ১৫০ বছর পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এই ওষুধ আঙুরের বীজ থেকে বের করা একটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। তবে কয়েকজন গবেষক মনে করছেন, এটা নিতান্তই একটি ওষুধ। মানুষের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত এর কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
শেনঝেনের বায়োটেক সংস্থা লংউই বায়োসায়েন্সেস এই ওষুধটি নিয়ে কাজ করছেন। এটি একটি অ্যান্টি এজিং ট্যাবলেট। যার মুখ্য উপাদান হল প্রোস্যানিডিন সি ১ (পিসিসি১)। যেটি আঙুর ফলের বীজে পাওয়া যায়। সংস্থার দাবি, এই ট্যাবলেট দুর্বল হয়ে যাওয়া শরীরের কোশগুলিকে ছেড়ে সতেজ কোশগুলিকে সুরক্ষিত রাখে। এতে মানুষের আয়ু বেড়ে যেতে পারে।
ইঁদুরের উপর প্রয়োগ
এর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে ২০২১ সালের নেচার মেটাবলিজম জার্নালে থাকা একটি গবেষণা থেকে। ইঁদুরের উপর এই অ্যান্টি এজিং ট্যাবলেটের পরীক্ষা করা হয়। পিসিসি১ ইঁদুরের বুড়ো কোশগুলিকে চিহ্নিত করে বাতিল করে দিয়েছে। সুস্থ কোশগুলিকে রক্ষা করেছে। ট্যাবলেট খাওয়া ইঁদুরটির জীবন ৯% বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরের জীবন ধরলে, ৬৪.২% বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংস্থার CEO ইপ স্তোঝো (জিকো) এই ট্যাবলেটকে 'দীর্ঘায়ু' প্রদান করার পথে একধাপ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, 'আর কয়েক বছরের মধ্যে মানুষ ১৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচার ক্ষমতা পেয়ে যাবেন। এবার মানুষের জন্য ট্যাবলেট তৈরি রে বাজারে আনব আমরা।'
বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা
তবে অন্য বহু বিজ্ঞানী এই নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ওক ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন এজিংয়ের বিশেষজ্ঞের দাবি, ইঁদুরের উপর প্রয়োগ ইতিবাচক হয়েছে। তবে মানুষের উপর একটি কার্যকর করা মুশকিল। এই প্রক্রিয়া জটিল। ওষুধের প্রভাবশীলতা এবং সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা প্রমাণ করে, বড় এবং কঠিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন রয়েছে। ওই বিশেষজ্ঞের আরও বক্তব্য, মানুষের আয়ু এতটা বয়স পর্যন্ত বেড়ে যাবে এমন দাবি করার আগে হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়া দরকার।
চিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
চিনে দীর্ঘায়ুর এই গবেষণাকে প্রাথমিক ভাবে অনুমোদন দিয়েছে রাষ্ট্র। সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি বড় বিনিয়োগ করছে। বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে তবে ১৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকা সকলের কাছেই কল্পনাতীত। যদিও দুনিয়া জুড়েই বেড়েছে অ্যান্টি এজিং নিয়ে রিসার্চ। তবে সাফল্য হাতে পেতে আরও সময় লাগবে।
এই গবেষণা মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে। অনেকেই ভাবছেন, অদূর ভবিষ্যতে ঠাকুমা-দাদুদের ১০০ বছর পেরিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক হিসেবেই বিবেচিত হবে। তবে ডাক্তারদের পরামর্শ, বর্তমানে সুষম ও স্বাস্থ্যকর আহার, শরীরচর্চা এবং ইতিবাচক অভ্যাস সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।