'ভারত-পাকিস্তান সংঘাত হলে, বাংলাদেশের উচিত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি দখল করা', আজব নিদান ইউনূস-ঘনিষ্ঠের

বাংলাদেশের এক প্রাক্তন সেনাকর্তা এবং প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর আজব পরামর্শ। তাঁর নিদান, পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার জবাবে যদি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি পাকিস্তান আক্রমণ করে, তাহলে ঢাকারও উচিত চিনের সঙ্গে সহযোগিতায় যুদ্ধে নামা।

Advertisement
'ভারত-পাকিস্তান সংঘাত হলে, বাংলাদেশের উচিত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি দখল করা', আজব নিদান ইউনূস-ঘনিষ্ঠের

বাংলাদেশের এক প্রাক্তন সেনাকর্তা এবং প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর আজব পরামর্শ। তাঁর নিদান, পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার জবাবে যদি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি পাকিস্তান আক্রমণ করে, তাহলে ঢাকারও উচিত চিনের সঙ্গে সহযোগিতায় যুদ্ধে নামা। তাঁর মতে, সেই সময়েই বাংলাদেশ নাকি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির দখল নিয়ে নেবে।

বাংলাাদেশের অন্তর্বর্কী সরকার যদিও এরপরেই জানায় যে, এটি সরকারের মতামত নয়।

গত মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক পোস্টে প্রাক্তন সেনাকর্তা ফজলুর রহমান লেখেন, ‘যদি ভারত পাকিস্তানে হামলা চালায়, তাহলে বাংলাদেশের উচিত ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্য দখল করে নেওয়া।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমার মতে, এই বিষয়ে চিনের সঙ্গে যৌথ সামরিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা শুরু করা দরকার।’

তাঁর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর বাংলাদেশের রাজনীতি ও কূটনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এই বক্তব্যের সঙ্গে ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার কোনও সম্পর্ক রাখে না বলে সাফ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। শুক্রবার এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, ‘‘এই মন্তব্য বাংলাদেশের সরকারের অবস্থান নয়। সরকার কোনওভাবেই এমন উস্কানিমূলক মতামতকে সমর্থন করে না।’’

ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার খবর অনুযায়ী, সরকার আরও অনুরোধ করেছে যেন এই ব্যক্তিগত মতামতের সঙ্গে রাষ্ট্রের অবস্থানকে মেলানো না হয়। মন্ত্রকের দাবি, বাংলাদেশ এখনও আন্তর্জাতিক নীতির ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব, ভৌগলিক অখণ্ডতা, পারস্পরিক সম্মান ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ফজলুর রহমানকে জাতীয় স্বতন্ত্র কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করেছিল ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই কমিশনের দায়িত্ব ছিল ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের মৃত্যুর তদন্ত করা।

এই ঘটনার কিছুদিন আগেই মার্চ মাসে চিন সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস। সেখানকার এক বাণিজ্য সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার সীমান্ত ভাগ করে। এই রাজ্যগুলো সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত নয়। সাগরে পৌঁছনোর একমাত্র রাস্তা বাংলাদেশ। তাই ঢাকাই এখন এই অঞ্চলের ‘একমাত্র অভিভাবক’। তিনি চিনকে আমন্ত্রণ জানান, যাতে তারা বাংলাদেশের মাধ্যমে তাদের পণ্য বিশ্বে পাঠাতে পারে।

Advertisement

ইউনুসের এই মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিভিন্ন দলের নেতারা তাঁর বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন।

এরপর এপ্রিল মাসে ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। শুধুমাত্র নেপাল ও ভুটানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রেই সেই ছাড় বহাল রাখা হয়। কারণ এই দুই দেশ WTO-এর নিয়ম অনুযায়ী স্থলবেষ্টিত হওয়ায় ভারতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এতদিন বাংলাদেশ পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ ও আরও অনেক দেশে রফতানির জন্য ভারতের একাধিক বন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করত। তবে ইউনুস সরকার সংখ্যালঘুদের উপর, বিশেষত হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক এক অত্যন্ত সংবেদনশীল পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, এখন তাকিয়ে রয়েছে দুই দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক মহল।

POST A COMMENT
Advertisement