আমেরিকা জানিয়েছে যে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর সৃষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে তারা ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে এবং তাদের একটি দায়িত্বশীল সমাধানের দিকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। হামলার পর মার্কিন সরকার ভারতের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে কিন্তু এখনও পাকিস্তানের সমালোচনা করেনি। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে, যেখানে ২৬ জন পর্যটক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পাকিস্তান ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এই জঙ্গি হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
মার্কিন বিদেশ দফতরের কজন মুখপাত্র বলেছেন, 'এটি একটি চিন্তার পরিস্থিতি এবং আমরা ঘটনাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।" আমরা ভারত ও পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ রাখছি। যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে একটি দায়িত্বশীল সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছে।' আমেরিকা আরও বলেছে যে ওয়াশিংটন ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। ভারত এশিয়ায় আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ওয়াশিংটনের লক্ষ্য চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলা করা এবং এই জন্য তারা এই অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে উদ্যোগী।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পদক্ষেপকে সমর্থন করবে: মাইকেল কুগেলম্যান
অন্যদিকে, পাকিস্তানও দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন মিত্র, যদিও ২০২১ সালে প্রতিবেশী আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর ওয়াশিংটনের কাছে ইসলামাবাদের গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের লেখক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন যে ভারত এখন পাকিস্তানের তুলনায় আমেরিকার অনেক ঘনিষ্ঠ অংশীদার। "এটি ইসলামাবাদে উদ্বেগ জাগাতে পারে যে ভারত যদি সামরিকভাবে প্রতিশোধ নেয়, তাহলে আমেরিকা তার সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে এবং পথে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করবে না," কুগেলম্যান রয়টার্সকে এমনটাই জানিয়েছেন।
কুগেলম্যান বলেন যে আমেরিকা ইতিমধ্যেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে জড়িত এবং এই উভয় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নিযুক্ত রয়েছে। এটা বলা যেতে পারে যে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ব মঞ্চে অনেক কিছু মোকাবেলা করছে এবং অন্তত ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার প্রাথমিক দিনগুলিতে, তারা পাকিস্তানকে একা ছেড়ে দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এবং হাডসন ইনস্টিটিউট থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সিনিয়র ফেলো হুসেইন হাক্কানিও বলেছেন যে মনে হচ্ছে আমেরিকা এই মুহূর্তে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনও মনোভাব রাখছে না।
এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী নয় আমেরিকা: হুসেইন হাক্কানি
হাক্কানি বলেছেন, 'ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিকাশ বা সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ আসছে। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই অনুভব করে আসছে যে ভারত তাদের ভেঙে ফেলতে চায়। উভয় দেশই প্রতি কয়েক বছর অন্তর উন্মত্ততার পর্যায়ে পৌঁছায়। এবার, আমেরিকা পরিস্থিতি শান্ত করতে আগ্রহী নয়।' চিনও পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করেছে, কিন্তু এতে পাকিস্তানের জড়িত থাকার বিষয়ে নীরব ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, যদিও চিন ভারতের তুলনায় পাকিস্তানের অনেক কাছাকাছি, তবুও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভারতের পাশে দাঁড়াতেও বাধ্য হচ্ছে। ভারত যদি প্রতিশোধমূলক সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে চিনের কাছ থেকে কোনও প্রতিরোধের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধের মধ্যে, বেজিং চাইবে না যে ভারতের সঙ্গে তার বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হোক।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পহেলগাঁও হামলাকারীদের পাতাল থেকেও টেন আনার অঙ্গীকার করেছেন এবং বলেছেন যে যারা এই জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করেছে তাদের কল্পনার বাইরেও শাস্তি দেওয়া হবে। ভারতের মানুষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছে। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর, ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে, যা সিন্ধু নদী এবং এর উপনদীগুলির জল বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে। ইতিমধ্যে, পাকিস্তান ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি বলছে যে পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করা জঙ্গি সংগঠন 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট' হল লস্কর-ই-তৈবা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলির একটি ফ্রন্ট গ্রুপ।