মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন রীতিমতো টার্গেট করে নিয়েছেন ভারতকে। ৫০ শতাংশ ট্যারিফ চাপিয়ে দিয়েছেন। আর আমেরিকার এই 'দাদাগিরি'র মোক্ষম জবাব দেওয়ার প্ল্যান কি ইতিমধ্যেই ছকে নিয়েছে ভারতও? ভারতের তরফে যে কূটনৈতিক সফরগুলি এই মুহূর্তে চলছে, তাতে অন্তত তেমনই ইঙ্গিত। সোজা কথায় বলতে গেলে, রাশিয়া, চিন ও ভারতের মধ্যে একটি জোট হওয়ার সম্ভাবনা স্পষ্ট। ট্রাম্পকে শায়েস্তা করতে কূটনৈতিক চাল দেওয়া শুরু।
কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে
একদিকে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়া সফরে গিয়েছেন ভারতের প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সেখানেই আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। অন্যদিকে দীর্ঘ ৭ বছর পর চিন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রাশিয়া যেতে পারেন।
অগাস্ট মাসে কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে। একের পর এক ‘শুল্ক বোমা’ ফেলছেন ট্রাম্প, যার নিশানায় রয়েছে ভারতও। কারণ, ভারত এখনও রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, যা, আমেরিকার দাবি, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে মস্কোকে অর্থ জুগিয়ে চলেছে।
ভারত কি বিদেশনীতির স্ট্র্যাটেজি বদল করছে
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প যেমন শুল্কের চাপ দিচ্ছেন, পাল্টা আমেরিকাকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে ভারতও। ইংরেজিতে যাকে বলে, প্রেসার ট্যাক্টিক্স। রাশিয়া ও চিনে যাওয়ার এই যে পদক্ষেপ, তা ভারতের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বদলের একটি ইঙ্গিত দিচ্ছে। যার নির্যাস, মস্কো ও বেজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করে আমেরিকাকে পাল্টা চাপে রাখা। আবার এই জোটে ব্রাজিলও অংশ নিতে চাইছে। এই ৪ দেশেরই একটাই লক্ষ্য, ট্রাম্পের বাণিজ্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এই দেশগুলি ট্রাম্পের ইগো ভেঙে ফেলতে চাইছে।
ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক তলানিতে
তবে ট্রাম্পের এই ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককেই সঙ্কটে ফেলেছে। অথচ ভারত হল আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বন্ধু, যাকে দীর্ঘদিন ধরেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের মোকাবিলায় পাশে রাখার চেষ্টা করে এসেছে ওয়াশিংটন।
ডোভাল রাশিয়ায়, মোদী যাচ্ছেন চিনে
অজিত ডোভাল যে দিন মস্কো পৌঁছলেন, ঠিক সেই দিনেই ট্রাম্প ভারতের উপর শাস্তিমূলক শুল্ক চাপিয়ে দিলেন। সূত্রের খবর, রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে আমেরিকার ক্ষোভ এবং ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ডোভাল-পুতিন বৈঠকে প্রাধান্য পেতে চলেছে। পাশাপাশি, বছরের শেষে ভ্লাদিমির পুতিনের দিল্লি সফরের প্রস্তুতিও নেবেন ডোভাল। ডোভালের সফরের ঠিক আগেই মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আমেরিকার দূত স্টিভ উইটকফ। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ৮ আগস্টের 'ডেডলাইন'-এর আগে রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর এটাই সম্ভবত শেষ চেষ্টা, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। তাই আপাতত ৮ অগাস্ট দিনটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের হুমকি, ৮ অগাস্ট ডেডলাইনে যুদ্ধবিরতি না হলে রাশিয়ার উপর আরও ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেবেন। সে ক্ষেত্রে ট্যারিফ বেড়ে দেড়শো শতাংশ হয়ে যাবে।
চলতি মাসের শেষের দিকে বেজিং সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (SCO) মিটিংয়ে যোগ দেবেন মোদী। রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় দুই ক্রেতা হল চিন ও ভারত। ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও কোনও দেশই পিছু হঠেনি।