চিনও বন্ধু, আমেরিকাও বন্ধু। এতদিন এই নীতিতেই চলত ভারত। তবে এবার কি আর সেই নীতি চলবে? একদিকে ভারতের উপর বেশ গোঁসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হঠাৎ চড়া শুল্ক চাপিয়েছেন। আর এমনই আবহে, শীঘ্রই চিন সফরে যেতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন অনেকেই। তাছাড়া এমনিতেও প্রধানমন্ত্রী এর আগে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, 'ভারতের স্বার্থ নিয়ে কোনও আপোস নয়।' আগামী ৩১ অগাস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চিনেই থাকবেন মোদী। যোগ দেবেন সংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে।
মোদীর এই সফরকে ঘিরে চিনে রীতিমতো চর্চা হচ্ছে। সেদেশের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে 'ভারত চিন সম্পর্কের এই ঘনিষ্ঠতা থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, আমেরিকা ভারতের স্বাধীন বিদেশনীতিকে কোনওভাবেই প্রভাবিত করতে পারবে না।'
ভারত চিন দুই ভাই?
চিনের সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে, 'হিন্দুদের মধ্যে একটা প্রবাদ আছে যে, তোমার নৌকায় ভাইকে বসিয়ে নাও, এমনিতেই তুমি নদী পার হয়ে যাবে।' তবে কি ট্রাম্পের শুল্ক বান পার করতেই ভ্রাতৃত্বের বার্তা চিনের।
সীমান্ত বিবাদের দূরত্ব ভুলে
গ্লোবাল টাইমস এটাও মনে করিয়ে দিয়েছে যে, যতই সীমান্ত বিবাদ ও মতপার্থক্য থাকুক, দুই দেশের সম্পর্ক বরাবর ভালই ছিল। ২০২০ সালে সীমান্তে সংঘর্ষের পর কিছুটা হয় তো ছেদ পড়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের অক্টোবরে কাজানে মোদী ও শি জিনপিংয়ের বৈঠকে ফের হাত মেলে দুই বন্ধুর।
তবে শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন। চলতি বছর জুনে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ও বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও চিন সফর সেরেছেন। গ্লোবাল টাইমসের দাবি, গালওয়ান সংঘাতের পর বিভিন্ন যৌথ প্রকল্প বন্ধ ছিল। সেগুলি ফের চালু হচ্ছে। দুই দেশই বলছে, সীমান্তে বিরোধ থাকলেও সেটা উন্নয়নের পথে অন্তরায় হওয়া উচিত নয়।
তবে শুধু মন্ত্রী আমলা স্তরেই যে সব সীমাবদ্ধ, এমনটাও নয়
গত জানুয়ারিতে চিন ভারতের তীর্থযাত্রীদের জন্য তিব্বতের কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবরের রাস্তা খুলে দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতও ২৪ জুলাই থেকে চিনা পর্যটকদের জন্য ট্র্যাভেল ভিসা দেওয়া শুরু করেছে।
তবে রয়েছে সংশয়ও। গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি, চিনের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা, চিনের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পুরোদমে চালু না হওয়ার মতো অন্তরায় এখনও রয়ে গিয়েছে। এগুলি দূর না হলে সম্পর্কের ভিত নড়ে যেতেও পারে!
মোদীর সফর নিয়ে গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, 'আমেরিকার শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার আবহেই এই সফরের খবর এসেছে। কিছু পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম একে আমেরিকার বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ বললেও, ভারত আসলে মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে এবং একতরফা শুল্কবৃদ্ধির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।' সবশেষে গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, 'এ যেন ড্রাগন ও হাতির ডুয়েট নৃত্য। শুরু হোক সেই নয়া অধ্যায়। সেই কামনা নিয়েই আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিন সফরকে স্বাগত জানাই।'