দু'সপ্তাহ ধরে চলছে ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ। পরস্পরের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছে মধ্য প্রাচ্যের এই দুই দেশ। ইজরায়েলের রাজধানী শহর তেল আভিভে শনিবার সকাল থেকেই সাইরেনের কান ফাটানো শব্দ শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে, ইজরায়েরি ক্ষেপণাস্ত্র থেকে বাঁচতে ইরানের রাজধানী তেহরান জুড়ে বাড়তচি সতর্কতা। মূলত ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিকেই টার্গেট করছে নেতানিয়াহুর দেশ।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কমপক্ষে ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে গত দু'সপ্তাহে। আহত কমবেশি ৩ হাজার। ইরানের রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতিনিধি আমির সাইদ ইরাভানি বলেন, '১৩ জুন থেকে বৃহত্তর হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। শয়ে শয়ে মানুষ মেরে চলেছে ওরা। অন্তত ২ অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুর খবর পাওযা গিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ আহত।'
ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রী গিদোঁ সার বলেন, 'পরমাণু বোমা তৈরির যে পরিকল্পনা ইরান করেছিল, তা ইজরায়েলি হামলায় ২-৩ বছর পিছিয়ে গিয়েছে।' ইজরায়েল হামলা বন্ধ না করলে পরমাণু চুক্তি নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইজরায়েল।
এদিকে, ক্ষণে ক্ষণে ভোলবদল করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি শান্তিদূত হিসেবে নিজেকে মধ্যস্থতাকারী প্রমাণ করতে চাইলেও তাঁর বক্তব্য, 'কখনও কখনও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে কঠোর হতে হয়।' তবে কি ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াবে আমেরিকা? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'সেটাই হয়ত সর্বশেষ জিনিস যা আপনি চাইবেন।' তবে এই পদক্ষেপ তিনি আদৌ করবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে ২ সপ্তাহ সময় চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আবার ট্রাম্প এ-ও মনে করেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস করার মতো ক্ষমতা নেই ইজরায়েলের। তারা ব্যর্থ হচ্ছে। পরমুহূর্তেই আবার ট্রাম্প বলেন, 'ইজরায়েলকে এখনই যুদ্ধ থামাতে বলা কঠিন কাজ। কেউ যখন জিতছে, তখন এ কাজ করা উচিত নয়। তবে আমরা প্রস্তুত। ইরানের সঙ্গেও আমরা কথা বলব। ইজরায়েল ভাল এগোচ্ছে। ইরান ততটাও ভাল পারছে না।' তবে এই যুদ্ধে অবসান ঘটাতে ইউরোপের দেশগুলি কোনও ভূমিকা পালন করতে পারবে না বলেই মনে করেন তিনি। এদিকে, নিজের দেশের স্পাই চিফ তুলসি গাবার্ডের তথ্যকেই সাফ খারিজ করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইরান পরমাণু বোমা তৈরি এবং ব্যবহার করতে পারে, এমন তথ্যই দিয়েছিলেন স্পাই চিফ, তা পত্রপাট নাকচ করে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরাস দুই দেশকেই সংঘর্ষবিরতির আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর আশঙ্কা এই সংঘাত বাড়তে থাকলে শুধু মধ্য প্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বেই বিরাট প্রভাব পড়বে। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন ইরানের পরমাণু পরিকল্পনার কথা।
অন্যদিকে, সংঘাত বিধ্বস্ত ইরান থেকে দিল্লিতে ফিরলেন ২৯০ জন ভারতীয়। ‘অপারেশন সিন্ধু’ নাম দেওয়া হয়েছে, ভারতীয়দের নিরাপদে দেশে ফেরানোর এই অভিযানকে। এখনও পর্যন্ত ইরানে আটকে পড়া মোট ৫৯০ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে দেশে। শুধু ইরান নয়, ইজ়রায়েলে থাকা ভারতীয়দেরও দেশে ফেরানো হবে ‘অপারেশন সিন্ধু’ কর্মসূচিতে। এদিনের ফ্লাইটেই ইরান থেকে দেশে ফিরেছেন ডাক্তারি পড়ুয়া শেহরিশ রাফিকি। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে কাশ্মীরের বাসিন্দা এই তরুণী বলেন, ‘আমি তেহরানের ইরান মেডিক্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে MBBS পড়ছি। এখন তেহরানের পরিস্থিতি ভীষণ খারাপ। বুঝতেই পারছিলাম না কী ভাবে ফিরব দেশে। ভারতীয় দূতাবাস ও কেন্দ্রকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তাঁরা যে ভাবে ও দেশে থাকা সমস্ত ভারতীয়দের ফেরাতে যে ভাবে উদ্যোগ নিয়েছে তা অভূতপূর্ব। সরকারকে ধন্যবাদ।’