ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ এখন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। উভয় দেশই একে অপরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। এদিকে, ইজরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইজরায়েলি স্টক এক্সচেঞ্জ এবং হাসপাতালগুলিতে আক্রমণ করেছে ইরান। যেখানে ২৫টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। পাল্টা ইজরায়েলের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রত্যাশা আবারও বেড়েছে। এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের কারণে ইরানে ভারতের ৫৫০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪৭৭১ কোটি টাকা) ঝুঁকির মুখে পড়েছে। আসলে ইরানে ভারতের বাণিজ্য এবং কৌশলগত স্বার্থ মূলত চাবাহার বন্দরের উপর কেন্দ্রীভূত, যা ইন্ডিয়া পোর্ট গ্লোবাল লিমিটেড (IPGL) এর মাধ্যমে পরিচালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।
এই বন্দর পাকিস্তানকে এড়িয়ে ভারতকে আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্য করার সুবিধা দেয়। এখন ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ এই বন্দরটিকে সমস্যায় ফেলতে পারে। কারণ এখন ওই যুদ্ধে আমেরিকার যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলির নিষেধাজ্ঞা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১০ বছরের চুক্তি
২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত ভারত চাবাহারে শহিদ বেহেস্তি টার্মিনাল পরিচালনার জন্য ১০ বছরের চুক্তিতে পৌঁছেছে। ইন্ডিয়া পোর্ট গ্লোবাল লিমিটেড বা আইপিজিএল ইরানের আরিয়া বানাদারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে বন্দরের কাজ চালায়। তবে, ২০১৭ সালের শুরুতে আদানি গ্রুপ এবং এসারের মতো বেসরকারি কোম্পানিগুলিও আগ্রহ দেখিয়েছিল। এই বন্দরের উন্নয়নে ভারত অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছে। এই বন্দরটি ইরান, আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য ভারতকে একটি বিকল্প রুট দেয়। ভারত চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের একটি টার্মিনাল তৈরির জন্য ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে।
এছাড়াও, বার্থ আপগ্রেডের জন্য ভারতের ৮৫ মিলিয়ন ডলার, এক্সিম ব্যাঙ্কের ১৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি লাইন অফ ক্রেডিট এবং চাবাহার-জাহেদান রেল লাইনের জন্য ইস্পাত আমদানি সহজ করার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি পৃথক লাইন অফ ক্রেডিট রয়েছে। শহিদ বেহেস্তি টার্মিনাল ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর। চাবাহার-জাহেদান রেলওয়ে প্রকল্পের আওতায় ১.৬ বিলিয়ন ডলারের মউ স্মারকের অধীনে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আইআরকন ইন্টারন্যাশনালের কাছে রেল লাইন পাতার কাজ হস্তান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু টাকা ঢালতে দেরি হওয়ার কারণে ইরান ২০২০ সালে আংশিকভাবে এই প্রকল্প থেকে সরে আসে। ২০২৬ সালের মধ্যে চাবাহার বন্দরকে ইরানের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাণিজ্যের একটি নতুন নেটওয়ার্ক যুক্ত করার চেষ্টা
কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারত এবং ইরান নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং অন্য কর্তারা চাবাহার এবং আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডর (আইএনএসটিসি) -এ সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছিলেন। এর লক্ষ্য ভারত, রাশিয়া, ইরান, মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য একটি বহুমুখী ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করা।
চিন-মার্কিন চ্যালেঞ্জ
চিন চাবাহার বন্দরের উন্নয়নেও আগ্রহী। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর আওতায় তারা চাবাহার বন্দরকে গোয়াদর বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। একই সঙ্গে চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে ভারতের যোগ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ইরানের উপর চাপানো নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে সতর্ক করে দিয়েছে। আমেরিকা এটা বলেছে যে ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করলে যে কোনও দেশ এই নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে পারে। বলা হচ্ছে যে ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধে আমেরিকার প্রবেশ চাবাহারের কাজকর্ম ব্যাহত করতে পারে। যার ফলে বিমা, সরবরাহ এবং আইএনএসটিসি করিডর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।