
আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং তাঁর হিন্দু স্ত্রী উষাবালা চিলুকুরিকে ঘিরে নতুন বিতর্কে তোলপাড় আমেরিকা ও ভারতীয় প্রবাসী মহল। সম্প্রতি এক আলোচনামূলক অনুষ্ঠানে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রীর ধর্ম পরিবর্তন নিয়ে মন্তব্য করেন, যা হিন্দু সমাজে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
গত ২৯ অক্টোবর ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’ নামের এক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স বলেন, 'আমি আশা করি, উষাও একদিন আমার পথেই আসবে। আমি যেমন খ্রিস্টান গসপেলে বিশ্বাস রেখেছি, আমার স্ত্রীও একদিন খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হবে।' তিনি আরও যোগ করেন, 'যদি তা না-ও হয়, তবে সেটিই ঈশ্বরের ইচ্ছা, তাতে আমার সমস্যা নেই।' কিন্তু এই মন্তব্যে রীতিমতো ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মহলে।
ভ্যান্স প্রোটেস্ট্যান্ট পরিবারে জন্মালেও ২০১৯ সালে তিনি ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণ করেন। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী উষা হিন্দু তেলুগু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং হিন্দু ধর্মাচার গভীরভাবে পালন করেন। ২০১৪ সালে দুজনের বিয়ে হয় হিন্দু ও খ্রিস্টান দুই ধর্মীয় রীতিতেই। তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে।
ভ্যান্সের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে তাঁকে ‘হিন্দু-ফোবিক’ ও ‘রাজনৈতিক ভণ্ড’ বলে সমালোচনা করছেন। অনেকের মতে, ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে ভ্যান্স এখন আমেরিকার গোঁড়া খ্রিস্টান ভোটব্যাঙ্কের মন জয় করতে চাইছেন। তাই রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি নিজের হিন্দু স্ত্রীকে ‘ধর্মান্তরের প্রলোভনে’ ফেলছেন।
প্রাক্তন ভারতীয় বিদেশ সচিব কানওয়াল সিবাল বলেন, 'ভ্যান্স নিজের স্ত্রীর ধর্মীয় পরিচয়কে মানতে অস্বীকার করছেন ভোটের রাজনীতির জন্য। একদিকে তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলেন, অন্যদিকে নিজের স্ত্রীর বিশ্বাসের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন, এটা ভণ্ডামি ছাড়া কিছু নয়।'
এদিকে, হিন্দু ধর্মে অটল উষাবালা ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ধর্ম পরিবর্তনের কোনও ইচ্ছা রাখেন না। তাঁর কথায়, 'আমি হিন্দু পরিবারে বড় হয়েছি। আমার বাবা-মা যেমন মানুষ হয়েছেন, তা তাঁদের হিন্দু সংস্কারের ফল। আমার সন্তানরাও হিন্দু ও খ্রিস্টান ঐতিহ্য মেনেই বড় হচ্ছে। ওরা জানে আমি ক্যাথলিক নই, তবুও আমার কাছ থেকে হিন্দু ধর্ম শেখে।'
ঘটনার আরেক দিকেও নজর পড়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ প্রয়াত নেতা চার্লি কার্কের স্ত্রী এরিকা কার্কের সঙ্গে ভ্যান্সের ঘনিষ্ঠতার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এরিকা ও ভ্যান্সের একটি আলিঙ্গনরত ছবি ভাইরাল হতেই জল্পনা আরও বাড়ে, ভ্যান্স কি তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিয়ে নতুন সম্পর্কের পথে হাঁটতে চলেছেন?