রবীন্দ্রনাথের পর ফের সাহিত্যে নোবেল পাবেন এক বাঙালি, রটে গিয়েছিল এমনটাই। নোবেল পুরস্কার নিয়ে ‘বাজি’ ধরা হয় বহুদিন থেকেই। আর এবারের বাজি ছিলেন জনপ্রিয় বাঙালি লেখক অমিতাভ ঘোষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড হে শুরু করে বিষয়টি। ভোটিংও করছে অনেক ওয়েবসাইট। কিন্তু পূর্ণ হল না বাঙালিদের সে আশা। এবারও বাঙালির ঝুলিতে এল না সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার। ২০২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হাঙ্গেরির সাহিত্যিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস ও যুদ্ধের পরিবেশের মধ্যেও সৃজনশীলতার গুণে শিল্পশক্তিকে পুনরায় স্বমহিমায় স্থাপিত করেছেন লাসলো। হাঙ্গেরির এই সাহিত্যিকের শিল্পকর্মকে ‘মনোমুগ্ধকর’ এবং ‘দূরদর্শী’ বলে উল্লেখ করেছে রয়্যাল সুইডিস অ্য়াকাডেমি।
২০২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ী হলেন হাঙ্গেরিয়ান এই সাহিত্যিক আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্যও তাঁর সাহিত্যে তাঁকে সমাদর এনে দিয়েছে। প্রায়শই ফ্রানজ কাফকা এবং স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাঁকে। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মাঝেও শিল্পের ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে তাঁর লেখায়। তাঁর সাহিত্য তাই এই যুদ্ধবিধ্বস্ত বছরের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিয়েছে।
২০১৪ সালে লাসলো তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছেন। এই পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। তাঁর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্বতন্ত্র শৈলী। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা, এবং আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন বিচরণ। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায় এক ধরণের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা। এমন এক জগতের পথিক সেই চরিত্ররা, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলুপ্তপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ তাঁর প্রথম এবং অন্যতম বিখ্যাত উপন্যাস। সেখানে বিচ্ছিন্ন একটি কৃষি নির্ভর গ্রামের জীবনকে তুলে ধরা হয়েছে। এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমন হয় সেই গ্রামে। আশার জন্ম দেন। এই উপন্যাস অবলম্বনেই বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর ৭ ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিসট্যান্স’ উপন্যাসে আবার হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরে একটি বিশাল হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যেকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা এবং একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র এঁকেছেন নোবেল পুরস্কারজয়ী। লাসলোর অন্যতম বিখ্যাত উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’। দীর্ঘ বাক্যের সমন্বয়ে রচিত এই উপন্যাস। এটি লাসলোর পারদর্শীতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছিল। ভাবিয়ে তুলেছিল পাঠকদের। নায়ক ইয়াঙ্কো এি কাহিনিতে বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায় একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য। এটি বিশ্বের ধ্বংসাত্মক রূপের একটি কাব্যিক বর্ণনা। নোবেল কমিটির মনোনয়নের নেপথ্যে বড় কারণ ছিল লাসলোর সাহিত্যে শিল্পের এই নির্মাণ শিল্প। একবিংশ শতকে তথা ২০২৫ সালে যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত, তখন বারবার শিল্পে প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।