বুধবার সময়ের কিছুটা আগেই আছড়ে পড়ল অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ওড়িশাপ বালেশ্বরের দক্ষিণ আছড়ে পড়ে ইয়াস। এর জেরে বাংলার পূর্ মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় উপকূল সংলগ্ন এলাকায় প্রবল জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়। একদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণি, তাজপুর এলাকা জলমগ্ন হচ্ছে অন্য দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, বকখালি এলাকায় একের পর এক গ্রামে জল ঢুকেছে। ফলে সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে ধ্বংসলীলায় ইয়াস কোনও ভাবেই আম্ফান ও আয়লাকে ছুঁতে পাড়ল না। এই দুই ঘূর্ণিঝড়ের দাপট ছিল আরও বেশি।
আয়লা
২০০৯ সালের ২১ মে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় আয়লা তৈরি হয়। যা পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানে ২৫ মে। যার ব্যাস ছিল প্রায় ৩০০ কিমি। রাজ্যের দক্ষিণ থেকে উত্তর প্রায় বহু জায়গাতেই আঘাত হেনেছিল আয়লা। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি এবং বর্ধমানে এর প্রভাব পড়েছিল। আয়লায় প্রায় দেড়শো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল রাস্তা। আয়লার জেরে দার্জিলিং-এ বর্ষণে ধসও নেমেছিল। পঞ্চাশ হাজার হেক্টর কৃষিজমির ফসল নষ্ট হয়েছিল। এর প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশেও।
আম্ফান
২০২০-র ১৮ মে আঘাত হেনেছিল সুপার সাইক্লোন আম্ফান। যা পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ছুঁয়ে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশে। এই রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমানের বিস্তীর্ণ অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। গভীর নিম্নচাপ থেকে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছিল সেটি। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এটিই ছিল এই শতাব্দীর প্রথম সুপার সাইক্লোন। আয়লার মতো আম্ফানও আঘাত হেনেছিল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে।
আম্ফানের স্মৃতি এখনও টাটকা বঙ্গবাসীর মনে। সবে একবছর হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ের। সুন্দরবনের প্রতন্ত এলাকার মানুষজনের অনেকেই আয়লার ক্ষয়ক্ষতিও সামলে উঠতে পারেননি এখনও। তবে আয়লা-আম্ফানের থেকেও কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় তুমুল ক্ষতিসাধন করেছিল। ঘটেছিল বিপুল প্রাণহানি। এমনি কয়েকটি ঝড়ের কথা এবার তুলে ধরা হল পাঠকদের সামনে।
দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন, বাংলাদেশ
১৮৭৬ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বরিশালের বাকেরগঞ্জে৷ সে সময় ব্রিটিশ শাসনকাল চলছিল৷ ভয়াবহ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ৷
ঘূর্ণিঝড় ভোলা
আজ থেকে অর্ধশতাব্দী আগে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ভোলা। সেই সময়ে এই ঘূর্ণিঝড় কেড়েছিল ৫ লক্ষ প্রাণ ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড় ভোলা আছড়ে পড়েছিল বঙ্গোপসাগর উপকূলে বাংলাদেশে। তখন অবশ্য বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের অংশ। পরিচির ছিল পূর্ব পাকিস্তান নামেই। ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানে ঘূর্ণিঝড় ভোলা তাণ্ডব চলিয়েছিল।
টাইফুন নিনার
১৯৭৫ সালে এসেছিল আর এক ভয়াবহ ঝড়। এই ঝড়ের দাপটে চিন মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছিল। এই ঝড়ের ঝাপটায় ২ লক্ষ ২৯ হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাসে এই ঝড় টাইফুন নিনা নামে পরিচিত। প্রশান্ত মহাসাগরের বুক চিরে ধেয়ে এসেছিল এই টাইফুন নিনা। তা আঘাত হেনেছিল চিনের বুকে।
ডিভিসিমা ঘূর্ণিঝড়
৯৭৭ সালে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে এসেছিল আর এক সাংঘাতিক ঝড়। যা ডিভিসিমা ঘূর্ণিঝড় নামে পরিচিত। বঙ্গোপসাগর দিয়ে এই ঝড় আছড়ে পড়েছিল ভারতের পূর্ব উপকূলে। তারপর এই ভয়াবহ সাইক্লোন কেড়ে নিয়েছিল প্রায় এক লক্ষ মানুষের প্রাণ।
১৯৯১-এর বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়
বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম বিধ্বংসী ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, যেটি ২৯শে এপ্রিল ঘণ্টায় ২৩৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত হেনেছিল৷ সমুদ্রের জলের উচ্চতা পৌঁছে গিয়েছিল সাত মিটার উঁচুতে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছিল উপকূলের অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ৷
তখন অবশ্য এই ঝড়ের কোনও নামকরণ করা হয়নি।
সুনামি
চার দেশের ২ লক্ষাধিক প্রাণ কেড়েছিল। ভূমিকম্পের পর এসেছিল ভয়ঙ্কর সুনামি। সেটা ছিল ২০০৪ সাল। ভারত, তাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া মিলিয়ে প্রায় ২ লক্ষ ২৭ হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছিল সুনামির তাণ্ডবে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় প্রবল সুনামি ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সবকিছু।
সিডার
বাংলাদেশের বুকে আছড়ে পড়ছিল ঘূর্ণিঝড় সিডার ২০০৭ সালে। ঘূর্ণিঝড় সিডার বঙ্গোপসাগর দিয়ে বয়ে গিয়ে আছড়ে পড়েছিল বাংলাদেশ উপকূলে। এই ঘূর্ণিঝড় শুধু ব্যাপক ক্ষতিসাধনই করেনি প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জীবনও কেড়ে নিয়েছিল।
নার্গিস
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি হলো নার্গিস৷ ২০০৮ সালের মে মাসে যেটি মায়ানমারে আঘাত হানে৷ এতে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ ৪ লাখ ৫০ হাজার ঘর-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়৷