পৃথিবী ছাড়া মহাবিশ্বের আর কোথাও কি প্রাণ আছে? তা নিয়ে বহু কাল ধরেই গবেষণা করে চলেছেন তাবড় তাবড় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। আমাদের কাছের গ্রহ মঙ্গলে কি মিলবে প্রাণের অস্তিত্ব তা নিয়ে এবার ইতিহাস অনেকটা পথ এগিয়ে গেল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মঙ্গল গ্রহের মাটি ছুঁয়েছে ল্যান্ডার ও রোভার ‘পারসিভেরান্স’। কঠিনতম 'টাচডাউন' প্রক্রিয়া শেষ করে লালগ্রহে সফলভাবে পা রেখেছে নাসার 'পারসিভিয়ারেন্স' রোভার।
আজ পর্যন্ত এতবড় যান মঙ্গলে কখনও পাঠায়নি নাসা। মঙ্গলে প্রাণের সন্ধানের খোঁজ করতেই এই ঝুঁকিপূর্ণ ঐতিহাসিক যাত্রা রোভার ‘পারসিভেরান্স’-এর। মার্কিন মহাকাশ সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, গত বছরের ৩০ জুলাই ফ্লোরিডা থেকে যাত্রা শুরুর পর ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে একটি প্রাচীন নদীর উপত্যকায় (জেজিরো ক্রেটার) অবতরণ করেছে নাসার সবথেকে আধুনিক রোভার। যা নাসার সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবতরণ ছিল। রোভারের এন্ট্রি, ডিসেন্ট এবং ল্যান্ডিং দলের প্রধান আল চেন জানিয়েছেন, আদতে যেখানে নামার কথা ছিল, তার এক মাইলের মতো দক্ষিণ-পূর্বে নেমেছে ‘পারসিভেরান্স’। শেষ পর্যায়ে নিজে থেকেই অবতরণের জন্য সবথেকে সুরক্ষিত জায়গা বেছে নিয়েছে রোভার। তারপরই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় নাসার জেট প্রপুলেশন ল্যাবরেটরি।
Touchdown confirmed. The #CountdownToMars is complete, but the mission is just beginning. pic.twitter.com/UvOyXQhhN9
— NASA (@NASA) February 18, 2021
‘পারসিভের্যান্স’-এর অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে টুইটবার্তায় বলা হয়, ‘অবতরণ নিশ্চিত।’ পরে লাল গ্রহের ছবি ট্যুইট করে লেখা হয়, ‘নমস্কার বিশ্ব! চিরকালীন বাড়ি থেকে আমার প্রথম লুক।’ বিশ্বের মহাকাশবিজ্ঞান চর্চার এই মহাকাব্যিক অধ্যায়ের নাম জড়াল ৪ ভারতীয় সন্তানেরও। এঁদের মধ্যে নাম রয়েছেন দুই বাঙালিও। ফলে লালগ্রহে মার্কিন মঙ্গলযানের পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই স্বাতী মোহন, ডে বব ববলরাম,অনুভব দত্ত,সৌম্য দত্তরা এক অসামান্য অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে গেলেন।
Hello, world. My first look at my forever home. #CountdownToMars pic.twitter.com/dkM9jE9I6X
— NASA's Perseverance Mars Rover (@NASAPersevere) February 18, 2021
'পারসিভেরান্স' অপারেশনস লিড হলেন স্বাতী মেনন। বেঙ্গালুরুর জে বব বলরাম হলেন 'ইনজেনুইটি'-এর চিফ ইঞ্জিনিয়ার। আছেন মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এরোডায়নামিক্স ও এরো-ইলেকট্রিসিটি বিভাগের অধ্যাপক অনুভব দত্ত। পাশাপাশি যে প্যারাশুটের মাধ্যমে লাল গ্রহে ‘পারসিভেরান্স’ পা দিয়েছে, তার নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিজ্ঞানী সৌম্য দত্ত। ইতিমধ্যে লাল গ্রহের মাটিতে কাজ চালাচ্ছে নাসার আরও দুটি মিশন - ২০১২ সালের মিশন কিউরিয়োসিটি এবং ২০১৮ সালের ইনসাইট ল্যান্ডার। নয়া ২.৭ বিলিয়ন ডলারের সর্বাধুনিক রোভারে 'ইনজেনুইটি' নামে চার রোটর বিশিষ্ট একটি ড্রোন হেলিকপ্টার আছে। সেটির মাধ্যমে এই প্রথম পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনও গ্রহে কপ্টার ওড়ানোর চেষ্টা করা হবে। বিভিন্ন জায়গার পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে আগামী মাসের মধ্যেই উড়তে পারে 'ইনজেনুইটি'। তারইমধ্যে জেজিরো উপত্যকায় শিলা এবং পলি নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে ‘পারসিভেরান্স’। এলাকার ভূতাত্ত্বিক গঠন, অতীতের আবহাওয়ার জানার চেষ্টা করবে। সেই সঙ্গে প্রাণের সন্ধানে চলবে খোঁজ।