Nepal Unrest Reason : নেপালে গণবিদ্রোহের নেপথ্যে শুধুই কি সোশ্যাল মিডিয়া? চিন, আমেরিকার নামও উঠে আসছে

'নেপালের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ার ওঠাতে চাইছিল। তবে তা দমন করা হয়েছ। সেদেশের বহু যুবক-যুবতী সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে সক্রিয়। ইউটিউব-সহ একাধিক সমাজ মাধ্যমে বারবার সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। তবে তা সংঘটিত চেহারা নেয়নি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছিল তাকে হাতিয়ার করে একজোট হতে পেরেছে যুবসমাজ।'  

Advertisement
নেপালে গণবিদ্রোহের নেপথ্যে শুধুই কি সোশ্যাল মিডিয়া? চিন, আমেরিকার নামও উঠে আসছে Nepal
হাইলাইটস
  • নেপালে গণবিদ্রোহের নেপথ্যে শুধুই কি সোশ্যাল মিডিয়া?
  • চিন, আমেরিকার নামও উঠে আসছে

সোমবার থেকে নেপালে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন শুরু করেছে Gen Z। সেই আন্দোলনের তীব্রতায় মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কেপি শর্মা ওলি। সম্প্রতি চিন থেকে ফিরেছিলেন তিনি। চলতি সেপ্টেম্বরেই ভারত সফরের কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তার মধ্যেই পদত্যাগ করতে হল। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে গদিচ্যুত হলেন সেখানকার প্রধানমন্ত্রী? সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ, বরিষ্ঠ সাংবাদিকরা এই আন্দোলন ও তার ফলাফল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। কারও মতে, অনেক আগে থেকেই ভিতরে ভিতরে দানা বাঁধছিল আন্দোলন। নেপালের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা করেছেন। আবার কারও মতে এর নেপথ্যে রয়েছে বিদেশি চক্রান্ত। 

নেপাল, সার্ক এবং চিন-তিব্বত বিষয়ক বিশিষ্ট সাংবাদিক কেশব প্রধানের মতে, 'নেপালের এই বিক্ষোভ হয়তো স্বতঃস্ফূর্ত। এর পিছনে কোনও বহিরাগত শক্তি রয়েছে, এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছনো এখনই ঠিক হবে না। দেশটা দীর্ঘদিন ধরে অস্থির। তার সুযোগ বিদেশি শক্তি নিতে পারে এখন, সেটা যদিও বলা যায়।' 

ওই সাংবাদিকের আরও দাবি, নেপালের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ার ওঠাতে চাইছিল। তবে তা দমন করা হয়েছ। সেদেশের বহু যুবক-যুবতী সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে সক্রিয়। ইউটিউব-সহ একাধিক সমাজ মাধ্যমে বারবার সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। তবে সেই আওয়াজ এমন আন্দোলনের চেহারা নেয়নি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছিল তাকে হাতিয়ার করে একজোট হতে পেরেছে যুবসমাজ। 

ওলির আমলে নেপালে বহিরাগত শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি 

এই অসন্তোষের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে, নেপালে বহিরাগত শক্তির প্রভাব বৃদ্ধিকে। ওলির নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেপাল চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দেওয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। আবার মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশনের অধীনে নেপালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে আমেরিকা। গত মাসে, ভারত ও চিন উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ পাস দিয়ে একটি বিজনেস করিডোর খুলেছে। তখন ওলি চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংকে বলেন, ওই অঞ্চলটি নেপালের। যদিও বাস্তবে তা ভারতের অংশ। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম কোনও নেপালি নেতা চিনা রাষ্ট্রপতির সামনে এমন বক্তব্য পেশ করেছিলেন। আবার ২০২০ সালে ওলি ১৮১৬ সালের সুগৌলি চুক্তির ভিত্তিতে লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিম্পিয়াধুরাকে নেপালের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। 

Advertisement

চিনের প্রতি ওলির ঝোঁক 

ওলিকে চিনপন্থী নেতা হিসেবে বিবেচনা করেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সিনিয়র কমিউনিস্ট নেতা ওলি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁকে ক্ষমতায় বসানোর নেপথ্যে চিনের হাত ছিল বলেই মনে করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এক বছর পরও তিনি ভারত সফর করেননি। নেপালের প্রধানমন্ত্রী ঐতিহ্যগতভাবে প্রথমে ভারতে যান, তবে ওলির প্রথম বিদেশ সফর ছিল চিন। গত ১৭ অগাস্ট, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি নেপাল সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তরফে থেকে ওলিকে ভারত সফরের জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। 

সাংবাদিক কেশব প্রধানের মতে, 'যখনই নেপালে রাজনৈতিক সংকট দেখা যায় তখনই ভারত বা চিনের নাম জুড়ে দেওয়া হয়। এই বছরের শুরুতে যখন রাজতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তখনও ভারতকে যুক্ত করার চেষ্টা হয়েছিল।' 

আবার বিশেষজ্ঞদের একাংশ নেপালের এই অস্থিরতার জন্য ওলিকেই দায়ি করছেন। তাঁদের মতে, ওলির রাজনীতি বাস্তবসম্মত নয়। তিনি ভারতের সঙ্গে নেপালের শতাব্দী প্রাচীন সুসম্পর্ককে মর্যাদা দিতে পারেননি। বারবার চিনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ঐতিহাসিকভাবে, নেপাল, ভারত এবং তিব্বতের সঙ্গে সীমান্তে অবস্থিত, চিন নয়। সেটাকে মান্যতা দিতে চাননি ওলি। 

আনেকে আবার নেপালের আজকের অবস্থার জন্য দায়ি করছেন আমেরিকাকে। যেমনটা বাংলাদেশে ঘটেছিল। কারও বিশ্বাস আমেরিকার এমসিসি বিনিয়োগকে দুর্বল করার জন্য চিন উস্কানি দিয়েছে। 

এই যুক্তি নিয়ে প্রধান বলেন,'চিনের বিআরআই এবং আমেরিকার এমসিসি নেপালে বিনিয়োগ করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক স্বার্থ দেখা দিচ্ছ। তবে বেজিংয়ের সরাসরি কোনও ভূমিকা নেই বলে মনে হয়। কারণ চিন পুরো নেপালে, বিশেষ করে তরাই অঞ্চলে এত বড় অস্থিরতা তৈরি করতে পারবে না। তাদের প্রভাব শুধু কাঠমাণ্ডুতেই সীমাবদ্ধ।

POST A COMMENT
Advertisement