ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে নেপালজুড়ে আন্দোলনে নেমেছে অল্পবয়সী যুবক-যুবতীরা। রক্তক্ষয়ী সেই আন্দোলনে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। জখম আড়াইশোরও বেশি। তবে নিজের অবস্থানে অনড় সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তিনি সাফ জানিয়েছেন, দেশবিরোধী কার্যকলাপ সহ্য করা হবে না। শ্যুট অ্যাট সাইটের অর্ডারও জারি হয়েছে। এই ঘোষণার পর আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বেড়েছে। পার্লামেন্টে আগুন ধরিয়েছে আন্দোলনকারীরা। 'ওলির পদত্যাগ চাই' উঠেছে স্লোগান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এই আন্দোলনের প্রাথমিক কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বলা হলেও ওলি সরকারের উপর নেপালের জনগণের একটা বড় অংশের ক্ষোভ অনেকদিনের। অভিযোগ, তাঁর আমলে সেই দেশে বেকারত্ব বেড়েছে, অনেকে কাজ হারিয়েছেন, শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেই ক্ষোভের আগুন ধিক ধিক করে জ্বলছিল। আর তাই আজ দাবানলের চেহারা নিয়েছে।
চলতি বছরেই ওলি সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তারমধ্যে অন্যতম হল-
রাজকুমার ঘুষ কেলেঙ্কারি : ২০২৫ সালের জুলাই মাসে কাস্কি জেলায় ভূমি কমিশনে নিয়োগের জন্য ৭৮ লক্ষ নেপালি টাকা ঘুষ দাবি করার অভিযোগ ওঠে মন্ত্রী রাজকুমার গুপ্তের বিরুদ্ধে। সেই সংক্রান্ত একটি অডিও ফাঁস হয়ে যায়।
মাধব কুমার ভূমি কেলেঙ্কারি : প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপাল এবং আরও ৯২ জনের বিরুদ্ধে ১৫ বছরের পুরনো জমি হস্তান্তরের জন্য সিআইএএ মামলা করেছে। অভিযোগ, জমির মালিকানার সীমা লঙ্ঘনের ফলে ১৮৫.৮৫ মিলিয়ন নেপালি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই মামলায় নেপাল সরকারের কয়েকজন প্রাক্তন মন্ত্রীর নামও ছিল অভিযুক্তদের তালিকায়।
নেপাল টেলিকম বিলিং কেলেঙ্কারি : ২০২৫ সালের জুনে বর্তমান এবং প্রাক্তন এমডি সহ ১৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিলিং সিস্টেম চুক্তিতে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। সরকার তাঁদের কাছ থেকে ৩৩৪.৮ মিলিয়ন নেপালি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি করে।
ভিজিট ভিসা চাঁদাবাজি : ২০২৫ সালের মে মাসে, সিআইএএ ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অফিসে অভিযান চালায়। ভিসা দুর্নীতি এবং চোরাচালানের অভিযোগে যুগ্ম সচিব তীর্থ রাজ ভট্টরাইকে গ্রেফতার করা হয়। গড়ে তোলা হয় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটিও।
পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কেলেঙ্কারি : চিনের ঋণে নির্মিত বিমানবন্দরে ১৪ বিলিয়ন নেপালি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তদন্ত শুরু হয়। তবে নথিপত্রের অভাবে তা স্থগিত হয়ে যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আন্দোলন নেপালের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। পূর্ব এশিয়া ফোরামের মতে, ওলি সরকার সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়েছে। এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি, নেপালের সরকারের সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞার পিছনে রয়েছে অন্য উদ্দেশ্য। বিরোধীরা যেন কোনওভাবেই এই সব মঞ্চকে ব্যবহার করে প্রতিবাদ না জানাতে পারে তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।