নেপালে এবার শুরু হয়েছে মন্ত্রী, নেতাদের ধরে মারধর। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। শোনা যাচ্ছে, ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কেপি শর্মা ওলি দুবাইয়ে পালিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্তও করছেন। কিন্তু কেপি ওলি যখন নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত, তখন রাস্তায় মার খাচ্ছেন নেপালের অন্য মন্ত্রীরা।
উপপ্রধানমন্ত্রীকে ধাওয়া করল উত্তেজিত জনতা
কাঠমাণ্ডুর রাস্তায় এক অভূতপূর্ব ঘটনা। নেপালের অর্থমন্ত্রী তথা উপ প্রধানমন্ত্রী বিষ্ণু প্রসাদ পাউডেলকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করল বিক্ষোভকারীরা। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেল, বিষ্ণুপ্রসাদকে রাস্তায় ফেলে মারছেন উত্তেজিত জনতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মন্ত্রীর চারপাশে ভিড় জমিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। হঠাৎ তাঁকে ধাওয়া করা শুরু হয়। একজন বিক্ষোভকারী পা দিয়ে লাথি মারতেই মাটিতে পড়ে যান মন্ত্রী। পরে তাঁকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে উত্তেজিত জনতা।
বোঝাই যাচ্ছে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ
পাউডেল শুধু বর্তমান অর্থমন্ত্রী নন, নেপালের রাজনীতিতে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। একসময়ে শিক্ষকতা ছেড়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। বহুবার তিনি দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (ইউএমএল)-এর সহ-সভাপতি। এত প্রভাবশালী নেতাকেও যখন রাস্তায় মারধর করতে পিছপা হচ্ছে না বিক্ষোভকারীরা, তখন বোঝাই যাচ্ছে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।
আমলাদেরও টার্গেট করছে জনতা
শুধু রাস্তায় বিক্ষোভ নয়, ক্ষোভ এবার গিয়ে ঠেকেছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানে। সংসদ ভবনে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে জনতা। ভবনের ভিতরে ও বাইরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে তারা। বিশাল ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে এলাকা। একইসঙ্গে একাধিক মন্ত্রীর বাড়িতেও আগুন ধরিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। ঐতিহাসিক সিং দরবারও তাঁদের দখলে চলে গিয়েছে। এমন অবস্থায় মন্ত্রীদের নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী। মন্ত্রীদের হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা। ঊর্ধ্বতন আমলাদেরও টার্গেট করছে জনতা।
নেপালের এই বিক্ষোভ এখন আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ। অনেকেই মনে করছেন, সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধর প্রতিবাদে বিক্ষোভ, স্রেফ হিমবাহের চূড়ামাত্র। আসলে দীর্ঘ দিনের আর্থিক সঙ্কট, চাকরির অভাব, অনটন, মূল্যবৃদ্ধিই এই ব্যাপক হিংসার নেপথ্যে রয়েছে। আর সাধারণ মানুষ ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন রাজপথে। নেপালের এই পরিস্থিতি গোটা দক্ষিণ এশিয়াতেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতও সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের পানিটাঙ্কি সীমান্তে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছে।