একে প্রবল অর্থনৈতিক মন্দা। তার উপর বাতাসেও বিষ। প্রাণে বাঁচাই এখন দায় হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের বাসিন্দাদের। ভারতে দিল্লি-NCR সহ উত্তরে বেশ কয়েকটি রাজ্যের বাসিন্দাদের প্রতিদিন বিষাক্ত ধোঁয়াশায় দূষণে প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিন্তু পাকিস্তানে যা পরিস্থিতি, তা রীতিমতো মারাত্মক। জানা গিয়েছে, দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি কয়েক ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই অবস্থা লাহোরে।
পাকিস্তানের লাহোর মানে একসময় সবুজ জমি ও সুন্দর ফুলের বাগান ছিল। সেই লাহোরেই এখন দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, হাসপাতালে বেড পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। চোখ জ্বলছে। শ্বাস নিতে পারছেন না হাজার হাজার মানুষ। লাহোরে AQI ১৯০০ ছাড়িয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি, ৩ মাসের জন্য বিবাহ অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের লাহোর। যেখানে সর্বত্র বিষাক্ত ধোঁয়াশায় অতিষ্ঠ মানুষ। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ১৫ হাজার রোগী শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সমস্যার প্রধান কারণ হল যানবাহন থেকে কার্বন নির্গমন, নির্মান শিল্পের ধুলো এবং শিল্প দূষণ।
এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা প্রয়োজন
লাহোরে অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সরকারের উচিত দূষণের প্রধান উৎসগুলি চিহ্নিত করে সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করা। উপরন্তু, বাসিন্দাদের গণপরিবহণ ব্যবহার করতে উত্সাহিত করা উচিত এবং ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা, ঘরে থাকা এবং এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা প্রয়োজন। লাহোরের জনগণ এবং প্রশাসনকে একসাথে এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে যাতে শহরের বাতাসের মান উন্নত হয় এবং বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়।
শিশু ও হৃদরোগীদের সমস্যা বেশি
রিপোর্ট অনুসারে, লাহোরের হাসপাতালগুলি শুকনো কাশি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, নিউমোনিয়া এবং বুকে সংক্রমণের রোগী ভর্তি। বেশির ভাগ রোগীই ভর্তি সরকারি হাসপাতালে। এর মধ্যে মেয়ো হাসপাতাল (৪০০০ এর বেশি রোগী), জিন্নাহ হাসপাতাল (সাড়ে ৩ হাজার রোগী), গঙ্গারাম হাসপাতাল (৩ হাজার রোগী) এবং শিশু হাসপাতাল (২ হাজারের বেশি) ভর্তি রয়েছে। পাকিস্তানের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ আশরাফ জিয়া সতর্ক করে দিয়েছেন, হাঁপানি ও হৃদরোগে আক্রান্ত শিশু ও রোগীরা যেন সরাসরি ধোঁয়াশার সংস্পর্শে না আসে। পাকিস্তানের পঞ্জাব অঞ্চলের কিছু অংশে বায়ু মানের সূচক ১০ নভেম্বর ১৯০০-এর উপরে রেকর্ড করা হয়েছিল।
৩ মাসের জন্য বিয়ের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ
নাসার মডারেট রেজোলিউশন ইমেজিং স্পেকটার রেডিওমিটার উত্তর পাকিস্তানে কুয়াশার একটি ছবি শেয়ার করেছে। নাসা মোডিস জানিয়েছে, নভেম্বরের শুরুতে উত্তর পাকিস্তানের আকাশ ঢেকেছে ঘন কুয়াশার চাদরে। এর কারণে বাতাসের মান খারাপ হয়ে যায়, স্কুল বন্ধ হয়ে যায় এবং শত শত মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। পাকিস্তান ধোঁয়াশা সঙ্কট মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব রকমের চেষ্টা করছে। বিয়েতে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
দূষণ WHO সীমার ৫০ গুণ বেশি
বর্তমানে দিল্লির দূষণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমার ৫০ গুণ বেশি। লাহোরের কথা বাদ দিন। সেখানকার অবস্থা নারকীয় হয়ে উঠেছে। সবাই তাদের বাড়িতে এয়ার ফিল্টার স্থাপন করতে পারে না। প্রতি বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তাপমাত্রা হ্রাস এবং ধীর গতির বাতাস দূষণকে আটকে রাখে।
দূষণের জন্য তিনটি পাহাড়ও দায়ী
বুধবার সকালে দিল্লিতে বসবাসকারী ৩ কোটিরও বেশি মানুষ শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করেছেন। দূষণের মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৮০৬ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ PM ২.৫ নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৫৩ গুণ বেশি। এছাড়া দিল্লিতে আবর্জনার তিনটি পাহাড়ও দূষণের অন্যতম বড় কারণ। এগুলি থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসগুলি দিল্লি-এনসিআরের বাতাসকেও মারাত্মক করে তোলে।