পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আগামী ১১ জুন জেল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। ২০২৩ সালের অগাস্ট থেকে বিভিন্ন মামলায় আদিয়ালা জেলে বন্দি রয়েছেন ইমরান খান। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ১১ জুন তিনি জামিন পেতে পারেন। দলের একজন শীর্ষ নেতা সংবাদ সংস্থাকে এই তথ্য দিয়েছেন।
রিপোর্ট অনুসারে, ইসলামাবাদ হাইকোর্টে ১১ জুন ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ড আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খান এবং তার স্ত্রী বুশরা বিবির সাজা স্থগিত করার আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তোশাখানা মামলা, দুর্নীতির মামলা এবং ৯ মে হিংসার অভিযোগে ইমরান খান গত কয়েক মাস ধরে জেলে রয়েছেন। তার মুক্তি কেবল পাকিস্তানের রাজনীতিতে শোরগোল ফেলবে না, বরং সেনাবাহিনী এবং বিচার বিভাগের মধ্যে সমীকরণের উপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান গওহর আলী খান আশা প্রকাশ করেছেন যে দলের প্রতিষ্ঠাতা ১১ জুন জামিন পাবেন। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সম্মতি ছাড়া তার জেল থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে, যদি তিনি সত্যিই জেল থেকে বেরিয়ে আসেন, তাহলে সম্ভবত তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনও সমঝোতায় পৌঁছেছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে, পাকিস্তানের ইসলামাবাদ হাইকোর্ট এমন অনেক ইঙ্গিত দিয়েছে, যা ইমরান খানের পক্ষে বলে মনে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট কিছু দুর্নীতির মামলায় সরকারের তদন্ত এবং আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, অন্যদিকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তার গ্রেফতারিকে 'প্রক্রিয়াগত ত্রুটি' বলে অভিহিত করেছে।
ইমরান খান কি ১১ জুন জেল থেকে বের হবেন?
১১ জুন ইসলামাবাদ হাইকোর্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ শুনানির কথা রয়েছে যেখানে তার জামিন বা মুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সূত্রের খবর, সেনাবাহিনী এবং সরকারের কিছু মহলও ইমরানের প্রতি নরম মনোভাব দেখাচ্ছে। ইমরান খানকে মুক্তি দেওয়া হলে, পাকিস্তানের বর্তমান জোট সরকার এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের উত্তেজনা বাড়তে পারে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার ইতিমধ্যেই দুর্বল সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর নির্ভর করছে। ইমরান খানের প্রত্যাবর্তন কেবল পিটিআইকে আক্রমণাত্মক করে তুলবে না, বরং দেশে পুনঃনির্বাচনের দাবি আরও তীব্র হতে পারে। ইমরান খানের মুক্তি তার দল পিটিআইয়ের নেতাদের মনোবল বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং তারা আবার রাস্তায় নেমে আসতে পারে।
পাকিস্তানের একটি বৃহৎ অংশের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা এখনও রয়েছে। ১১ জুন যদি তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়, তাহলে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের চিত্র সম্পূর্ণরূপে বদলে যেতে পারে। পিটিআই আবারও বড় প্রচার এবং সমাবেশের মাধ্যমে দেশজুড়ে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। তবে, এটাও নিশ্চিত যে তার প্রত্যাবর্তন সহজ হবে না, কারণ ক্ষমতাসীনরা এখনও তাঁর বিরুদ্ধে। তবে ইমরানের মুক্তি পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল পাহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারতের 'সিঁদুর অভিযান' পাকিস্তানের সামরিক কৌশলের দুর্বলতা উন্মোচিত করে দেয়। জনসাধারণের সামনে পাক সেনপ্রধান আসিম মুনিরের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করে। এর পর, মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়, যা অনেকেই মুখ বাঁচানোর এবং আত্ম-অভিনন্দনের একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। ইমরান খানের আসন্ন মুক্তি সম্পর্কে গোহর আলী খানের দাবি মুনিরের পশ্চাদপসরণের ইঙ্গিত দিতে পারে, অথবা সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক দাবার ছকে আরও একটি পদক্ষেপ হতে পারে। তবে দ্বন্দ্বের দেশ পাকিস্তানে, ১১ জুনের আগে পর্যন্ত কিছুই নিশ্চিত নয়।