নয়া পরিকল্পনা পাকিস্তানের পাকিস্তান বিভাজন। এই শব্দবন্ধ মাথায় এলেই পাকিস্তানের থেকে বাংলাদেশের পৃথক হওয়ার ইতিহাস চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেটা ১৯৭১ সাল। কিন্তু, এখন যে বিভাজনের কথা বলা হচ্ছে, তা দুই চেহারায় ধরা দিতে পারে বলে মত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের। প্রথমটা হল- পাকিস্তানের দুই প্রদেশের পৃথকীকরণ। দ্বিতীয় মতটি এসেছে পাকিস্তান সরকারের তরফেই। তাদের দাবি, পরিষেবা আরও উন্নত করতে প্রদেশগুলোকেই ভাগ করা হবে।
রবিবার পাকিস্তানের যোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল হালিম খান জানান, পাকিস্তান আরও ছোট ছোট প্রদেশ করার পক্ষে। শাসনব্যবস্থার উন্নতির জন্য এই পদক্ষেপ প্রয়োজন। যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, আরও বেশি প্রদেশে বিভক্ত হলে পাকিস্তানের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। এর কারণ কী? সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে দেখে নেওয়া যাক পাকিস্তান এখনই দুটো প্রদেশ নিয়ে কোন আশঙ্কায় ভুগছে।
পাকিস্তানে চার প্রদেশের মধ্যে অন্যতম হল বালুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া। এর মধ্যে বালুচিস্তান বরাবরই পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে চায়। সেই ১৯৪৭ সাল থেকে। তা নিয়ে দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তান সরকার ও সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে বালুচ আর্মি। আসলে ১৯৪৭ সালে কালাত রাজ্যকে জোর করে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যা বালুচরা মেনে নিতে পারেননি। মূল সমস্যার সূত্রপাত সেখানেই। বেলুচরা নিজেদের একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী বলে মনে করে। ফলে তাঁদের সংস্কৃতি ও পরিচয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ চায় পাকিস্তান। যা তাঁদের পছন্দ নয়। বেলুচের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ স্বাধীনতা চায় পাকিস্তান থেকে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে বালুচিস্তান। যা বিপদের কারণ হতে পারে শেহবাজ শরিফের সরকারের।
একই আশঙ্কা করা হচ্ছে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের ক্ষেত্রেও। সেখানকার ক্ষমতায় আছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল। তবে ইমরানের কারাবাস হওয়ার পর থেকেই সেই প্রদেশে কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে পাকিস্তান সরকার। সেই প্রদেশের বহু মানুষও পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে চান।
দুই প্রদেশ নিয়ে এমন গভীর সঙ্কটের মধ্যেই পাকিস্তান সরকার দেশকে আরও প্রদেশে বিভক্ত করতে চায়ছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিকল্পনার নেপথ্যে রয়েছে নিয়ন্ত্রণ বা কব্জার স্বার্থ। যেহেতু বেলুচিস্তান বা খাইবার পাখতুনখাওয়ার মতো প্রদেশে সরকার নিজের মর্জি মতো ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারছে না, তাই আরও বিভক্ত করে রাজত্ব কায়েম করতে চায়। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শেহবাজ শরিফ বা আসিম মুনিররা বুঝতে পেরেছেন, খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে যে কোনও দিন বড়সড় বিদ্রোহ সংগঠিত হতে পারে। যা সামাল দেওয়া সরকারের পক্ষে কঠিন। তাই আগেভাগেই প্রদেশগুলোকে ছোট করার সিদ্ধান্ত।
যদিও এমন পরিকল্পনা পাকিস্তান প্রথম করছে তা নয়। এর আগে হলেও তা কোনওদিন বাস্তবায়িত করতে পারেনি। যদিও এখন দাবি করা হচ্ছে, ২৮তম সংশোধনীর মাধ্যমে নতুন প্রদেশ গঠনের জন্য সমস্ত আইনি এবং গণতান্ত্রিক উপায় বের করা হবে।
যদিও প্রদেশ ভাগ করা নিয়ে পাকিস্তান সরকারের আমলারাও দ্বিধাবিভক্ত। এক শীর্ষ স্থানীয় আধিকারিকের দাবি, যদি অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি সমাধান না করা যায় তাহলে এই নয়া প্রদেশ আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী তৈরি হবে। সরকারকে প্রতি মুহূর্তে বিপদে পড়তে হবে। তাঁর কথায়, 'পাকিস্তানের সামনে প্রধান সমস্যা প্রদেশের সংখ্যা নয় বরং শাসনব্যবস্থার ফাঁক। দুর্বল প্রতিষ্ঠান, অসম প্রয়োগ এবং জবাবদিহিতার অভাব রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রদানের ক্ষমতাকে হ্রাস করেছে। কেবল প্রদেশ না বাড়িয়ে মৌলিক কাঠামোগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। তা না হলে সঙ্কট আরও বাড়বে।'