ভারতের সঙ্গে লাগতে এসেছিল পাকিস্তান। রেষারেষি করে ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছিন্ন করেছে। আর তাতে তাদের দেশে মূল্যবৃদ্ধি এমন জায়গায় গিয়েছেন, যাতে নাভিশ্বাস অবস্থা দেশবাসীর। শুধু শহরে না, গ্রামে গঞ্জে প্রত্যন্ত এলাকাতেও মূল্যবৃদ্ধির গনগনে আঁচে ঝলসে যাচ্ছে আম-জনতা। রোজকার সামগ্রী থেকে শৌখিন দ্রব্য, কিছুতেই হাত দেওয়া যাচ্ছে না।
সস্তার চা-ও জুটছে না অনেক পাকিস্তানির কপালে
এমনকী নেহাত নিতান্ত সস্তার চা, তাও জুটছে না অনেক পাকিস্তানির কপালে। ভারতের সঙ্গে জোর-জবরদস্তি রাজনৈতিক রেষারেষির ফল পাকিস্তানবাসীকে ভোগ করতে হচ্ছে জীবন দিয়ে। একবারে প্রাণে মারা পড়ছেন না তাঁরা। কিন্তু প্রাণের চাইতেও ভয়ংকর ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন পাকিস্তানবাসীরা।
রাস্তায় এক কাপ চায়ের দাম ৪০ টাকা
গত এক বছরে পাকিস্তানের চড়চড় করে বেড়েছে জিনিসের দাম। যদি পাকিস্তান চাইত, তাহলে তার ভারত থেকে সস্তায় চিনি নিয়ে যেতে পারত। যা তারা আগে করতো। কিন্তু ভারত থেকে চিনি আমদানি করতে তারা অস্বীকার করে। পাকিস্তানের সুপারস্টার বোলার শোয়েব আখতারের শহর রাওয়ালপিন্ডিতে চা, না পেয়ে মানুষের মস্তিষ্কের ভারসাম্য বিগড়ে যাচ্ছে বলে খবর মিলেছে। সেখানে এখন রাস্তায় এক কাপ চায়ের দাম ৪০ টাকা।
চা পাতা, টি ব্যাগ, দুধ, চিনি এবং গ্যাসের দাম ক্রমবর্ধমান
পাকিস্তানের সংবাদপত্র্র সঙ্গে কথাবার্তায় এক চাওয়ালা জানিয়েছেন। যে আগে এক কাপ চা ২৫ থেকে ৩০ টাকা ছিল। এখন বেড়ে ৪০ টাকা হয়েছে। সম্প্রতি চায়ের দামে আরও একবার বৃদ্ধি পেয়েছে। চা পাতা, টি ব্যাগ, দুধ, চিনি এবং গ্যাসের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে ৪০ টাকার নীচে চা বিক্রি করলে দু টাকা লাভ রাখতে পারবেন না।
কোনটার কত দাম বেড়েছে ?
ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, যে দুধের দাম ১০৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা প্রতি লিটার হয়েছে। এ ছাড়া চা পাতার দাম ৮ শো থেকে ৯শো টাকা কেজি, গ্যাস সিলিন্ডার পনেরশো থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই চা-ওয়ালা জানিয়েছেন যে, তাঁর দৈনিক আয় পুরো লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। তার কাছে চায়ের দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
চায়ের অর্ডার তলানিতে
এদিকে দাম বাড়াতে চায়ের বিক্রি কমে গিয়েছে অনেকটাই। ফলে সব দিকেই তাদের নাজেহাল অবস্থা। তিনি জানিয়েছেন, আমার একদিনের কামাই ২ হাজার ৬০০ টাকার মতো ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তিনি তার একদিনের আয়ের এর হিসাব যুক্ত করে দেখেনি মাত্র সারাদিনে ১৫ টাকা লাভ করেছেন। এইভাবে তাদের সংসার চলবে কি করে, তিনি বুঝতে পারছেন না। এ জন্য তিনি চায়ের দাম বাড়িয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে দাম বাড়াতে বিক্রি-বাট্টা গিয়েছে কমে। জানা গিয়েছে, যে চায়ের দামে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোটখাটো বিক্রেতাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। চায়ের দাম বাড়ায় বহু নিয়মিত খদ্দের আর দোকানে আসছেন না। যারা সারা দিনে পাঁচ কাপ চা খেতে তারা এখন এক কাপে নেমে এসেছেন। আশপাশের বড় দোকান, অফিস, সব জায়গা থেকে চায়ের অর্ডার কমে গিয়েছে।
ভারত থেকে চিনি, গম আমদানি বন্ধ
জানিয়ে দেওয়া যাক যে পাকিস্তানের সরকার ইমরান খানের নেতৃত্বে ভারতের সঙ্গে রেষারেষিতে জেদের বশে ভারত থেকে চিনি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু চিনি নয় বিভিন্ন রকম ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ রেখেছে ভারতের সঙ্গে। তাদের জেদের ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কিছুদিন আগেই ট্রেডিং কর্পোরেশন অব পাকিস্তান এর তরফ থেকে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। যাতে ৮ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন চিনি পাকিস্তানে পৌঁছেছিল। এই চিনির জন্য পাকিস্তান প্রায় ১১০ টাকা প্রতি কিলো কিনতে হয়েছিল
কেজিতে কেজিতে ক্ষতি পাকিস্তানের
সেখানে গত বছর ভারতের সঙ্গে চুক্তি রদের আগে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব পাকিস্তানে এক লাখ টন চিনি ইমপোর্ট করা হয়েছিল। ভারত থেকে চিনি নিলে প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশ টাকা প্রতি কিলোগ্রামে কম পরে।ভারতের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করার কারণে তাদের এই বাড়তি ক্ষতির বোঝা টানতে হচ্ছে। পাকিস্তান এই বছরে এপ্রিল মাসের পর ভারত থেকে চিনি আমদানি করা বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান জানিয়েছিল ভারত যতদিন পর্যন্ত কাশ্মীরের আর্টিকেল ৩৭০ ধারা পুনর্বহাল করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তান চিনি এবং অন্যান্য জরুরি সামগ্রী ভারত থেকে কিনবে না।