পাক অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন পাকিস্তানের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার করাচিতে কয়েকশো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ইসলামাবাদে আইনজীবীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। ইসলামাবাদের ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে আইনজীবীদের অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ অভিযান চালায়। সাংবাদিক ও বিক্ষোভকারীদের মারধর করে। এর আগে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়।। ৩৮ বছরের মধ্যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি (এএসি) নেতা শওকত নওয়াজ মীর পাকিস্তান সরকার এবং আসিম মুনিরের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর দমন করার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, 'এই সরকার ডাইনিতে পরিণত হয়েছে। ডাইনি নিজের সন্তানদের খায় এবং এই সরকার এখন নিজের সন্তানদের এবং জনগণকে হত্যা করার জন্য তৎপর। এই সরকার নিজের জনগণকে হত্যা করবে এবং মিডিয়ার উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করবে, যাতে এখানকার কথা বাইরে পৌঁছতে না পারে।'
পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বিক্ষোভ কারা করছে?
মুজফ্ফরাবাদ, মীরপুর, কোটলি, রাওয়ালকোট এবং নীলম ভ্যালি সহ পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি জেলায় বৃহৎ আকারের বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভের কারণে দোকানপাট বন্ধ ছিল, গাড়ি চলেনি। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বেশিরভাগ অঞ্চল স্তব্ধ হয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি (এএসি), যা ব্যবসায়ী, আইনজীবী, ছাত্র এবং সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলির সমন্বয়ে গঠিত।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ব্যবসায়ী, আইনজীবী এবং ছাত্ররা বিপুল সংখ্যায় রয়েছেন। বিশেষ করে অল্প বয়সের যুবক যুবতীরা শাহবাজ শরিফ সরকারের নীতি এবং মুনিরের সেনাবাহিনীর বাড়াবাড়ির প্রতি গভীর ক্ষুব্ধ। কারণ বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি এবং দুর্বল পরিষেবা তাঁদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। পড়ুয়ারা এই বিক্ষোভকে আরও তীব্র করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহার করেছিল। যার কারণে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা নিয়ে বিদেশেও ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হচ্ছে।
শাহবাজ শরিফ সরকারের কাছ থেকে বিক্ষোভকারীরা কী চায়?
বিক্ষোভকারীরা স্লোগান তুলছে, 'শাসকরা, দেখো, আমরা তোমাদের মৃত্যু, বিপ্লব আসবে, কাশ্মীর আমাদের, আমরা এর ভাগ্য নির্ধারণ করব, এটি আমাদের দেশ।' বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছে যে পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনী পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে কেবল সম্পদের উৎস হিসেবে বিবেচনা করে, অন্যদিকে এর জনগণের মৌলিক চাহিদাকা উপেক্ষা করছে। AAC এবং অন্যান্য সংগঠনগুলি সরকারের কাছে ৩৮ দফা দাবি পেশ করে। দাবিগুলি খারিজ হতেই বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানে বসবাসকারী কাশ্মীরি শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত ১২টি বিধানসভা আসন বাতিল করা। বিদ্যুতের দাম কমানো, গম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর ভর্তুকি দেওয়া এবং স্থানীয় রাজস্বের উপর নিয়ন্ত্রণ। জনগণ আরও দাবি করছে যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের স্থানীয় জনগণ সরাসরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে। অভিযোগ করা হচ্ছে যে পাকিস্তান সরকার এই অঞ্চলে প্রকল্পগুলি থেকে অনেক রাজস্ব আয় করে, তবুও এখানকার মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, পানী জলের জন্য হাহাকার করছে। এছাড়াও, বিক্ষোভকারীরা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য স্ব-শাসন এবং এর জনগণের জন্য অনেক অধিকারের দাবি জানিয়েছে।