ভোরের আলো ফোটেনি। ডিনিপ্রো শহরের দিগন্তে সবেমাত্র লাল রঙ ফুটতে শুরু করেছে। তখনও চারপাশে ভোরের শান্ত-স্নিগ্ধতা। হঠাতই বিকট শব্দে কাটল ছন্দ। সূর্যোদয়ের রাঙা আকাশ ফাটিয়ে ছুটে এল ভয়ানক মিসাইল। ইউক্রেনের শান্ত শহরে ভয়ানক ICBM হামলা চালাল রাশিয়া।
ICBM কী?
এর ফুল ফর্ম হল ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল। সাধারণত এই ধরণের মিসাইল প্রায় ৫,৫০০ কিলোমিটার দূরে গিয়েও আঘাত হানতে পারে। নাম থেকেই স্পষ্ট, এই ধরণের মিসাইল গুলি অন্য মহাদেশের শত্রু ঘাঁটিতেও আঘাত হানতে সক্ষম।
রিপোর্ট অনুযায়ী, এদিন এই আইসিবিএম দিয়েই হানা চালিয়েছে রাশিয়া। যত-ই যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হোক, এই ধরণের ভয়ানক মিসাইলের ব্যবহার সত্যিই অভাবনীয়। বলা হচ্ছে, আস্ট্রখান এলাকা থেকে এই মিসাইল ইউক্রেনের উদ্দেশে লঞ্চ করেছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী এই হামলার কথা কনফার্ম করেছে। এই মিসাইল ছাড়াও হাইপারসনিক এবং KH-101 ক্রুজ মিসাইল দিয়েও হামলা চালানো হয়েছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, তাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই হামলায় অ-পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
রাশিয়া তার দূরপাল্লার বোমারু বিমান Tu-95MS ক্রুজ মিসাইল দিয়ে এদিন হামলা চালিয়েছিল। এই বম্বার বিমানগুলি ভলগোগ্রাদ থেকে এসেছে বলে দাবি ইউক্রেনের এয়ার ফোর্সের। অন্যদিকে তাম্ভব এলাকা থেকে মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান মারফত হাইপারসনিক মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে।
রাশিয়ার দাবি...
অন্যদিকে রাশিয়ার দাবি, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুইটি ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো মিসাইলকে আঘাত হানার আগে- মাঝ আকাশেই রুখে দিয়েছে। তাদের দাবি, রাশিয়ার ক্ষতি করতে ইউক্রেন এই মিসাইল ছুঁড়েছিল। সেটা যদি সত্যি হয়, সেক্ষেত্রে এই প্রথম রাশিয়ার বিরুদ্ধে এমন মারাত্মক শক্তিশালী ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করল ইউক্রেন।
এর আগে ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের কাছে যা খবর ছিল...
গত ২০ নভেম্বর, ইউক্রেনের গোয়েন্দারা আগেভাগেই রাশিয়ার এই সম্ভাব্য হামলার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, রুশ সেনাবাহিনী তাদের ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল R-26 রেডি করছে। ইউক্রেনে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া।
উল্লেখ্য, কাপুস্টিন ইয়ার বিমান ঘাঁটি থেকে এই মিসাইল লঞ্চ করা হয়। এই অঞ্চলটিকে আস্ট্রখানও বলা হয়।
খুব সহজভাবে বললে, এই ধরণের বেশিরভাগ মিসাইল প্রকৃতপক্ষে রকেট। হ্যাঁ, যেমন রকেটে করে মহাকাশে স্যাটেলাইট, নভোশ্চর পাঠানো হয়, অনেকটা তেমনই। এর সঙ্গে আসল মারণ অস্ত্র যুক্ত করা হয়। সেটা পারমাণবিক অস্ত্রও হতে পারে, আবার অন্য কিছুও।
জানা গিয়েছে, এদিন রাশিয়া যে মিসাইল ছুঁড়েছিল, তার ওজন ৩৬ হাজার কিলোগ্রাম। একে একে ১৫০-৩০০ কিলোটনের চারটি অস্ত্র এতে ফিট করা যায়। অর্থাৎ, চারটি টার্গেটে একসঙ্গে হামলা চালানো যেতে পারে। এই ক্ষেপনাস্ত্র অ্যাভানগার্ড হাইপারসনিক গ্লাইড যান বহন করতেও সক্ষম। ফলে চাইলে এই আক্রমণ আরও শক্তিশালী ও রক্তক্ষয়ী হতে পারত।
এই মিসাইলের রেঞ্জ প্রায় ৬,০০০ কিলোমিটার। প্রায় ২৪,৫০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে এটি টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম। অর্থাৎ, বিশ্বের কোনও বিমান বাহিনীর পক্ষেই আকাশে থাকা অবস্থায় এই মিসাইলকে আটকে দেওয়া সম্ভব নয়।
আর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এই ধরণের মিসাইল যে কোনও জায়গায়, রোড-মোবাইল লঞ্চার থেকেই লঞ্চ করা যায়।
ফলে এটা সহজেই অনুমেয় যে, পরিস্থিতি আরও ধীরে ধীরে আরও উত্তপ্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই মিসাইল নিক্ষেপের প্রভাব কী হয়, সেটাই দেখার।