scorecardresearch
 

Russia Ukraine War : রাশিয়া -ইউক্রেন দ্বন্দ্ব: সব তথ্য এক ঝলকে

Russia Ukraine War : ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বিবাদের কারণ কী? এই বিবাদের প্রকৃত কারণ হল ইউক্রেনের NATO-তে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ। আমেরিকাও চায় যে, ইউক্রেন NATO অর্থাৎ NORTH ATLANTIC TREATY ORGANIZATION-এর সঙ্গে যুক্ত হোক বা এর সদস্য হোক। এটাই হল রাশিয়ার মাথাব্যথার প্রধান কারণ।

Advertisement
ফাইল ছবি (AP/PTI) ফাইল ছবি (AP/PTI)
হাইলাইটস
  • রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বিবাদ
  • ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বিবাদের কারণ কী
  • ইউক্রেন NATO-র সদস্য হলে আপত্তি কোথায় রাশিয়ার ?

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বিবাদ। এই বিষয়টাই বিগত কয়েকদিন ধরে খবরের শিরোনাম দখল করে রেখেছে। দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এই সমস্যা কি বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাবে? এই রকম আশঙ্কার কারণও আছে। কারণ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দাবি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই রাশিয়া বড় কোনও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একাধিকবার দাবি করেছেন, ইউক্রেনের উপর হামলার জন্য রাশিয়া প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটা ভয় এবং আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

কিন্তু দুই দেশ অর্থাৎ ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বিবাদের কারণ কী? এই বিবাদের প্রকৃত কারণ হল ইউক্রেনের NATO-তে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ। আমেরিকাও চায় যে, ইউক্রেন NATO অর্থাৎ NORTH ATLANTIC TREATY ORGANIZATION-এর সঙ্গে যুক্ত হোক বা এর সদস্য হোক। এটাই হল রাশিয়ার মাথাব্যথার প্রধান কারণ। ইউক্রেন  NATO-র সদস্য হোক এটা রাশিয়া কোনওভাবেই চায় না। তাই রাশিয়া আমেরিকার থেকে শুধু আশ্বাসই নয়, তাদের থেকে লিগাল গ্যারান্টিও চায়, যাতে ইউক্রেন কোনওভাবেই NATO-র সদস্য হতে না পারে।

NATO কী ?

১৯৪৯ সালে আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও আরও ৮টি ইউরোপের দেশ মিলে এই NATO তৈরি করে। এখন এই অর্গানাইজেশনে ৩০টি দেশ রয়েছে। এই NATO-র সদস্য দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে জুড়ে থাকে বা একে অপরকে সাহায্য করে। এই অর্গানাইজেশনের অর্ন্তভুক্ত কোনও দেশের উপর যদি বাইরের কোনও দেশ আক্রমণ করে বা আক্রমণের কথা বলে তাহলে NATO ছেড়ে কথা বলে না। সেক্ষেত্রে NATO-র যত সদস্য দেশ আছে তারা সবাই একত্রিত হয়ে যায় ও বাইরের সেই দেশকে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে।

Advertisement
NATO
NATO

এবার প্রশ্ন ইউক্রেন কেন NATO-র সদস্য হতে চায়? ইউক্রেন জানে যে, তারা নিজেদের শক্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে লড়তে পারবে না। কারণ, ইউক্রেনের কাছে না আছে রাশিয়ার মতো সেনা, অত্যাধুনিক হাতিয়ার বা অর্থবল। ২০১৪ সালে এই রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া নামের একটা অঞ্চলের কার্যত দখল নিয়ে নেয় ও নিজেদের দেশের অন্তর্ভুক্ত করে। ইউক্রেনের এখন ভয়, তারা যদি নিজেদের শক্তি না বাড়ায় তাহলে রাশিয়া ফের তাদের এলাকা দখল করবে। ঠিক এই নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা থেকেই ইউক্রেন চাইছে NATO-র সদস্য হতে। যাতে তারা সুরক্ষিত থাকতে পারে।

রাশিয়ার এত মাথাব্যথা কেন?  

যে প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে তা হল ইউক্রেন যদি  NATO-র সদস্য হয়ে যায়, তাহলে রাশিয়ার এত মাথাব্যথা কেন?  রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ যেমন এস্টোনিয়া, লাথবিয়া একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। কিন্তু, এখন এই দেশগুলো NATO-র সদস্য। রাশিয়ার চিন্তা হল, যদি ইউক্রেনও NATO-র সদস্য হয়, তাহলে রাশিয়াকে এই NATO কিন্তু চারদিক থেকে ঘিরে ফেলবে। ফলে আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশের রাশিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করা সহজ হয়ে যাবে। যা তাদের উদ্বেগের বা ভয়ের একটা কারণ বলা যেতে পারে। আর রাশিয়া এটাও খুব ভালোভাবে জানে, যদি ইউক্রেন NATO-র সদস্য হয়, তাহলে NATO-র যে দেশগুলো আছে তারা কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলে যাবে।

NATO-র জন্ম কেন হয়েছিল ? 

এখানে আর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা না বললেই নয়। তা হল, এই  NATO-র জন্মই হয়েছিল রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে বা সোভিয়েত ইউনিয়নকে একঘরে করতে। এই বিষয়টা বুঝতে গেলে একটু ইতিহাসের দিকে নজর দিতে হবে। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়। ইতালি ও জাপানের বিরুদ্ধে আমেরিকা, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন- এই দেশগুলো যুদ্ধ করেছিল। ১৯৪৫ সালে জাপানের উপর পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে আমেরিকা ও বিশ্বযুদ্ধের শেষ হয়। কিন্তু, আমেরিকার এই পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেয়নি সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারা প্রশ্ন তোলে, যুদ্ধের সহযোগী দেশ হয়েও আমেরিকা কেন তাদের এই পরমাণু বোমা সম্পর্কে কোনও তথ্য দেয়নি বা তাদের থেকে এই তথ্য গোপন রেখেছিল। এই যে মনোমালিন্য তাই দুই দেশকে কার্যত COLD WAR-এর দিকে টেনে নিয়ে যায়। দুই দেশই সেই তখন থেকেই নিজেদের শক্তি বাড়াতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। দুই দেশেরই লক্ষ্য হয়ে ওঠে, যত বেশি সংখ্যক দেশকে নিজের দিকে টানা যায়। আর ঠিক সেই সময়  NATO তৈরি হয়। ১২ দেশের সমর্থন নিয়ে আমেরিকা NATO তৈরি করে ফেলে। আর আজ সেই NATO-ই হল ৩০টি দেশের সংগঠন।

ভারতের অবস্থান

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বা বিরোধ তাতে ভারতের কী সমস্যা হতে পারে? অনেকের মনেই এই প্রশ্ন যে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তা যদি যুদ্ধের আকার নেয় তাহলে ভারত কোন পক্ষ নেবে। কারণ, ইউক্রেন সামনে থাকলেও এই দ্বন্দ্ব আসলে আমেরিকা ও রাশিয়ার। আপনারা জানেন যে, আমেরিকা ও রাশিয়া এই দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক ভালো। সামরিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর ভারত অনেকটাই নির্ভরশীল। এখনও প্রায় ৫৫ শতাংশ হাতিয়ার রাশিয়ার থেকে কেনে ভারত। আবার গত ১০ বছরে আমেরিকার সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। ইউক্রেনের সঙ্গেও ভারতের বাণিজ্যিক ও কূটনেতিক সম্পর্ক ভালো। অর্থাৎ ভারত এই তিন দেশের মধ্যে কারও সঙ্গেই নিজের সম্পর্ক খারাপ করতে চাইবে না।

Advertisement

ইউক্রেন সংকট বাড়লে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তার উপর প্রভাব পড়তে পারে। ট্রেডিং ইকোনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ইউক্রেন ও ভারতের মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার। দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৭২০.২১ মিলিয়ন ডলার আমদানিও হয়েছে। একই সময়ে, ভারত রাশিয়া থেকে ৫.৯৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

 

Advertisement