হিরোশিমা-নাগাসাকির বীভৎসতা আজও ভুলতে পারেনি এই দুনিয়া। তার মধ্যেই আবারও পরমাণু হামলার আশঙ্কায় কাঁপছে পৃথিবী। রাশিয়া কি পরমাণু হামলা চালাবে? আন্তর্জাতিক মহলে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।
রুশ বাহিনীর হানার ১০০০ তম দিনে আমেরিকার থেকে পাওয়া মাঝারি পাল্লার 'আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম' বা এটিএসিএমএস ব্যবহার করে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় ইউক্রেন হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। পুতিনের দেশ দাবি করেছে, মোট ৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইউক্রেন। ওই ৬টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৫টিকেই আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। রুশ ভূখণ্ডে ওই অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছেন আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই ঘটনার জেরেই রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুত্র ডোনাল্ড জুনিয়র। নতুন করে পরমাণু হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের এহেন পদক্ষেপর পরই রণকৌশল সাজাতে উঠেপড়ে লেগেছে পুতিনের দেশ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার সংক্রান্ত একটি নতুন নীতি অনুমোদন করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, এখন যদি কোনও দেশ পরমাণু অস্ত্রধারী কোনও দেশের সহযোগিতায় হামলা চালায়, তাহলে তা যৌথ হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। রাশিয়া স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, তাদের দেশের মাটিতে যগি পশ্চিমী অস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, তা হলে শুধু ইউক্রেন নয়, ওই দেশগুলিকেও নিশানা করা হবে। যার জেরেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
কখন পরমাণু হামলা চালাতে পারে রাশিয়া?
* পরমাণু অস্ত্রধর কোনও দেশের সাহায্যে রাশিয়ার মাটিতে যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়, তা হলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে পুতিনের দেশ।
* যদি কোনও দেশ রাশিয়ায় ড্রোন হামলা চালায়, তা হলে তার জবাবে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে রাশিয়া।
* রাশিয়ায় ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করা হলে পরমাণু হামলা চালাতে পারে সে দেশ।
* আকাশে যদি কোনও হামলা চালানো হয়, যা একপ্রকার রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতো, তা হলে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করে প্রত্যাঘাত করতে পারে রাশিয়া।
* যদি রাশিয়া মনে করে, তাদের দেশ এবং দেশবাসী বিপদে রয়েছেন, তবে পরমাণু হামলা চালাতে পারে তারা।
পরমাণু হামলা হলে কী হবে?
পরমাণু হামলার বীভৎসতা কী, তার জাপানের হিরোশিমা-নাকাসাকির অবস্থা দেখেছে গোটা দুনিয়া। সুইৎজারল্যান্ডের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপেনস বা আইসিএএন জানিয়েছে, একটা পরমাণু বোমার আঘাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে। যদি ১০ বা ১০০টি পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করা হয়, তা হলে শুধু লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুই হবে না, পৃথিবীর গোটা সিস্টেমটাই নষ্ট হয়ে যাবে। ১টা পরমাণু বোমার হানায় গোটা শহর ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে বড়সড় পরমাণু বোমা ফেললে, কোটি কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। শুধু তাই নয়, কোটি কোটি মানুষ অনাহারে দিন কাটাবেন। নষ্ট হয়ে যাবে ফসল। এমনকী, ভেঙে পড়বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও। ফলে জখমরা চিকিৎসাও করাতে পারবেন না। এই ধরনের হামলা চালালে জলবায়ু সিস্টেম পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার আঁচ পড়বে কৃষিকাজে।
এই মুহূর্তে গোটা দুনিয়াই বিশ্ব উষ্ণায়নের কবলে। ফলে এই পরিস্থিতিতে পরমাণু হামলা হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করবে। বহু জায়গায় সূর্যের আলোও পৌঁছবে না। পরমাণু হামলার প্রভাবে দুনিয়ায় বৃষ্টিপাতের হার কমে যাবে ৪৫ শতাংশ। পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৭ থেকে মাইনাস ৮ ডিগ্রিতে পৌঁছে যাবে। ১৮ হাজার বছর আগে আইস এজ বা বরফের যুগ ছিল। সেই সময় তাপমাত্রা ছিল মাইনা, ৫ ডিগ্রি। ফলে ১৮ হাজার বছর পিছিয়ে যাবে পৃথিবী।