Iran-Israel Conflict: শুক্রবার রাত ৯টা ১৯ মিনিট। হঠাৎ মৃদু ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উত্তর ইরানের বিস্তীর্ণ এলাকা(Iran Earthquake 2025)। রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫.১। অর্থাৎ ভয়ঙ্কর না হলেও একেবারে হেলাফেলার মতোও নয়। কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল সেমনান প্রদেশ। মূল সেমনান শহর থেকে প্রায় ৩৬ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল মাটি থেকে ১০ কিমি নিচে। সেই কম্পন এমনই ছিল যে, তেহরান সহ আশপাশের এলাকাতেও মানুষজন তা ভালই টের পায়।
ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে এই ভূমিকম্প নিয়ে শুরু হয় তীব্র জল্পনা। তবে কি ইরানে গোপনে কোনও পরমাণু বোমা পরীক্ষা হচ্ছে? রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৫ জুনও ইরানের ফোর্ডো এলাকায় ২.৫ মাত্রার সামান্য কম্পন অনুভূত হয়েছিল। আর তা হয়েছিল ইজরায়েলের হামলার ঠিক পরেই।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই কম্পনকে কেন্দ্র করে নতুন করে জল্পনা(Nuclear Test Rumors Iran) তৈরি হয়েছে।
পারমাণবিক পরীক্ষা?
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইজরায়েলের হামলার পর ইরানের ন্যাটাঞ্জ ও ফোর্ডো পরমাণু কেন্দ্রে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর এমন পরিস্থিতিতেই সেমনান ও ফোর্ডোর কম্পনকে মোটেই স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না অনেকে। তাঁদের দাবি, ভূগর্ভে গোপনে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এই সেমনান এলাকাতেই ইরান একটি মহাকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি আছে। আর তার কাছাকাছিই ভূমিকম্প হওয়ায় জল্পনা আরও বাড়ছে।
ইরান কিন্তু বেশ ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ
ইরান অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এটি আলপাইন-হিমালয়ান ভূকম্পন বেল্টের ওপর অবস্থিত। ফলে এখানে প্রতিনিয়ত টেকটনিক মুভমেন্ট চলতে থাকে। সেই কারণে এদেশে বছরে ২,০০০-টিরও বেশি ভূমিকম্প হয়। তবে বেশিরভাগই মৃদু। ১৫-১৬টি হয় তো ৫.০ বা তার বেশি মাত্রার হয়। পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ইরানে মোট ৯৬ হাজার ভূমিকম্প হয়েছে। ফলে ইরানে যে ভূমিকম্প বিষয়টি নতুন কিছু নয়, তা বলাই বাহুল্য।
তাই এখনই পরমাণু পরীক্ষার দিকে বিষয়টি না নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়, মত বিশেষজ্ঞদের।
পরমাণু বিস্ফোরণ থেকে ভূমিকম্প ঠিক কেমন হয়?
পরমাণু বিস্ফোরণ থেকেও ভূমিকম্প হতে পারে। তবে এই বিস্ফোরণ থেকে হওয়া কম্পন সাধারণত ছোট মাত্রার ও সীমিত অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ইউএসজিএস-এর তথ্য বলছে, এই ধরনের বিস্ফোরণে 'পি-ওয়েভ' (Compressional Waves) তৈরি হয়। অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভূমিকম্পে পি ও এস-ওয়েভ (Shear Waves) দু'টিই থাকে। বার্কলে সিসমোলজি ল্যাবও জানিয়েছে, পরমাণু পরীক্ষার সিসমোগ্রাফে মূলত পি-ওয়েভ-ই দেখা যায়। ফলে কোনটি পরমাণু বিস্ফোরণ আর কোনটি প্রাকৃতিক ভূমিকম্প, তা খুঁজে বের করা খুব কঠিন ব্যাপার নয়।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
১৫ জুন ফোর্ডোতে যে ২.৫ মাত্রার কম্পন হয়েছিল এবং ২১ জুন সেমনানে যে ৫.১ মাত্রার কম্পন হয়েছে, দু'টি ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলি ভূতাত্ত্বিক কারণেই হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভূমিকম্প। কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার-টেস্ট-ব্যান ট্রিটি অর্গানাইজেশন (CTBTO), USGS ও ভূকম্পবিদদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই কম্পনের পিছনে কোনও পারমাণবিক বিস্ফোরণের যোগ নেই।
তবু তদন্ত ও নজরদারি জরুরি
কোনও দেশে যুদ্ধ, অস্থিরতা থাকলে ছোটখাটো গুজবও আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভূমিকম্প নিয়েও অনেকে ভয় পাচ্ছেন। তবে এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য ও বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সেমনান ও ফোর্ডোর কম্পন সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। তবে সংঘাত-প্রবণ অঞ্চলে আগাম সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি, মত বিশেষজ্ঞদের।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ও এমন গুজব রটেছিল...
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ও পাকিস্তানে মৃদু ভূমিকম্প হয়েছিল। তখনও অনেকে পরমাণু পরীক্ষার অভিযোগ তুলেছিলেন। কিন্তু ‘ইন্ডিয়া টুডে’ সে সময় সিসমোগ্রাফি ও কম্পন-তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে, ও প্রমাণ করে দেয় যে, ওই কম্পন আসলে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ছিল।