কেন্দ্রের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের একটি নেতৃত্ব দিচ্ছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। পাঁচ দেশের সফরের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। শুক্রবার কলম্বিয়ায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে, সেদেশের সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন তিনি। ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের (অপারেশন সিঁদুর) পর পাকিস্তানে নিহতদের উদ্দেশ্যে কলম্বিয়া যেভাবে 'শোকবার্তা' পাঠিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন থারুর।
তিনি বলেন, ‘কলম্বিয়া সরকারের প্রতিক্রিয়া দেখে আমরা কিছুটা হতাশ। ওঁরা পাকিস্তানে নিহতদের জন্য আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের শিকার যাঁরা, তাঁদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেনি।’
থারুর সাফ জানান, ‘যারা জঙ্গিদের পাঠায়, আর যারা পাল্টা প্রতিরোধ করে, তাদের মধ্যে কোনও তুলনা হয় না। যারা আক্রমণ করে, আর যারা আত্মরক্ষা করে, তারা এক নয়। আমরা কেবল আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করছি। এই মৌলিক বিষয়টি যদি কেউ না বোঝেন, তাহলে আমরা সেটা স্পষ্ট করে দিতেই এখানে এসেছি। আমরা কলম্বিয়ার সঙ্গে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনায় আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে নিরীহদের ওপর নৃশংস জঙ্গি হামলার পরই ভারতের তরফে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’।
কলম্বিয়াও সন্ত্রাস-জর্জরিত
শশী থারুর জানান, ‘ঠিক যেমন কলম্বিয়াও বহু বছর ধরে জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে, তেমনই ভারতও প্রায় চার দশক ধরে বারবার সন্ত্রাসবাদী হামলা সহ্য করছে। এই বাস্তবতা বোঝা খুব জরুরি।’
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে, হয়তো পরিস্থিতি পুরোপুরি বোঝা হয়নি যখন সেই বিবৃতি (পাকিস্তানে মৃত্যুর জন্য কলম্বিয়ার শোকবার্তা) দেওয়া হয়েছিল। আমরা চাই, পৃথিবীর অন্য সরকারগুলো যারা জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়, তাদের যেন সেই কাজ বন্ধ করতে বলা হয়। এটা নিরাপত্তা পরিষদে হোক বা তার বাইরেই।’
তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা নিয়ে যা বললেন...
ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা নিয়ে জল্পনা উঠেছিল। তবে শশী থারুর স্পষ্ট বলেন, ভারতের সঙ্গে কোনও রকম 'ফর্মাল মিডিয়েশন' হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, সৌদি আরবের উচ্চপদস্থ কর্তাদের থেকে ফোন পেয়েছি। আমরা সবার কাছে এক কথাই বলেছি—আমরা যুদ্ধ চাই না। এটা সন্ত্রাসবাদের প্রতিশোধ ছিল। তারা থামলে আমরাও থামব।’
তিনি আরও জানান, ‘মে ৭ তারিখ রাতে যখন সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু হয়, তখন থেকেই আমাদের কোনও আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা এই সংঘাতে প্রথমে আক্রমণকারী পক্ষ নই।’
শশী থারুর এই মুহূর্তে গায়ানা, পানামা, কলম্বিয়া, ব্রাজিল এবং আমেরিকা সফর করছেন। এই সফরের উদ্দেশ্য—পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার প্রমাণ তুলে ধরা, ৯/১১ হামলার সঙ্গে যোগসূত্রসহ, এবং বোঝানো যে এই সাম্প্রতিক সংঘাত 'অপারেশন সিঁদুর' জন্য নয়, বরং পাহেলগাঁয়ের জঙ্গি হামলাই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।