২০ বছর পর ফের তালিবানের (Taliban) দখলে আফগানিস্তান (Afghanistan)। রবিবারই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন আশরফ গনি (Ashraf Ghani)। প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত দেশের একটা বড় অংশের মানুষ। রাস্তায় যানজট, ব্যাপক ব্যস্ততা বিমানবন্দরে। দেশ ছাড়ার পর আশরফ গনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'অগণিত মানুষের মৃত্যু হলে এবং কাবুলের ধ্বংস দেখতে হলে তা ৬০ লক্ষ জনসংখ্যা বিশিষ্ঠ এই শহরের পক্ষে অত্যন্ত অমানবীয় হত। রক্তের নদী বয়ে যাওয়া আটকাতে দেশের বাইরে যাওয়াই ঠিক বলে মনে হল।' পাশাপাশি শোনা যাচ্ছিল উপরাষ্ট্রপতি আমরুল্লাহ সালেহও দেশে ছেড়ে চলে গিয়েছেন, কিন্তু পরে সালেহ জানিয়েদেন তিনি আফগানিস্তানেই আছেন।
এবার কী হবে?
আফগানিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই (Hamid Karzai) জানান, ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একটি পরিষদ গঠান করা হচ্ছে। হামিদ কারজাই, শান্তি আলোচনার প্রতিনিধি প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ এবং হেসব-ই-ইসলামি দলের নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার একসঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে কাজ করছেন। নেতৃত্ব দিতে পারেন মোল্লা বরাদর। প্রসঙ্গত ইতিমধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে তালিবান। আফগানিস্থানে কোনও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে না বলেই জানান হয়েছে তালিবানের তরফে। এই প্রসঙ্গে তালিবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ আজতককে বলেন, 'আলি আহমদ জালানি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য প্রার্থী ছিলেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও কথাই নেই। এই সব কথা মিথ্যা।'
ভারতে কেমন প্রভাব?
আফগানিস্তানে পুনরায় তালিবান শাসনের জেরে ভারতে খারাপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে হামিদ কারজাই ও ডা. আবদুল্লা থাকাই সম্পর্ক ভাল থাকতে পারে বলেও আশা করা হচ্ছে। যদিও পাকিস্তান এবং তালিবানের মধ্যে মজবুত সম্পর্কের বিষয়টিও কোনওভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এই বিষয়ে জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, তাঁরা ভারত সহ সমস্ত দেশের সঙ্গে ভাল সম্পর্কের আশা রাখেন। তাঁরা আফগানিস্তানের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন। যদিও আগে সম্পর্ক ভাল ছিল না, তবে এখন সম্পর্ক ভাল রাখারই চেষ্টা করা হবে।
ভাল সম্পর্কের আশা
কিন্তু তালিবান ও পাকিস্তানের (Pakistan) সম্পর্ক মজবুত, তাহলে ভারতের সঙ্গে কীভাবে ভাল সম্পর্ক হবে? এই বিষয়ে জাবিউল্লাহ বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যে বিষয়টি রয়েছে, সেটি তাদেরকেই সমাধান করতে হবে। আফগানিস্তান দুটি দেশের সঙ্গেই যুক্ত। তাঁরা চান সমস্ত দেশের মধ্যেই সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। জাবিউল্লাহ আরও বলেন, পাকিস্তান তাঁদের প্রতিবেশী এবং তাঁদের মধ্যে অনেকের কাছেই সেটি দ্বিতীয় বাড়ি। তাঁর শুধু চান সমস্ত দেশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তৈরি হোক। যদিও আফগিন্তানে ভারত যে বিনিয়োগ করেছে সেগুলির ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া পাকস্তানের সঙ্গে চিনের (China) সম্পর্ক ভাল থাকায় তা তালিবান তথা আফগানিস্তানের পক্ষেও সুবিধাজনক হতে পারে। আর বলাই বাহল্য তেমনটা হলে তা অবশ্যই ভারতের পক্ষে চিন্তাজনক।
আফগানিস্তানে এর কী প্রভাব?
এদিকে তালিবান ফের দেশের ক্ষমতা দখল করতেই মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। পুনরায় শরিয়তী আইন লাগুর আশঙ্কায় ভুগছেন মানুষ। অনেকেই দেশ ছেড়ে পালনর চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যেই তালিবানের বর্বরতারও বেশকিছু ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। মানুষের বাড়ি দখল করে নিচ্ছে তালিবান। যদিও নিজেদের বাহিনীকে বিনা অনুমতিতে কোনও বাড়িতেই ঢুকতে নিষেধ করেছে তালিবানি নেতৃত্ব।
এদিকে ভীতসন্ত্রস্তও সংবাদমাধ্যমও। বেশকিছু সংবাদমাধ্যমের অফিস ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোথাও আবার কয়েকদিনের জন্য কাজকর্ম স্থগিত রয়েছে। সাংসস্কৃতিক কাজ কর্ম, নাচগান এবং সিনেমার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এককথায় বলতে গেলে তালিবানের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই মহিলা, বিরোধী শিবিরের রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মচারী এবং সাংবাদিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।