থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে বিবাদ বড় আকার ধারণ করছে। সংঘর্ষের জেরে থাইল্যান্ডে কমপক্ষে ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত ৪৬-এর বেশি। থাইল্যান্ডের সরকারের তরফে এই পরিসংখ্যান দেওয়া হলেও তা আরও বেশি বলে বেসরকারি সূত্রে খবর। লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহচ্যুত হয়েছেন। কেন দুই দেশের মধ্যে বিবাদ? পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় ডেস্টিনেশন থাইল্যান্ডে বেড়ানো কি তবে আর নিরাপদ নয়? উঠছে প্রশ্ন।
কী নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ?
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যুদ্ধের নেপথ্যে রয়েছে এক শিবমন্দির। দাংরেক পর্বতের উপরে অবস্থিত প্রিয়াহ ভিহিয়ার বা প্রিয়া বিহার শিবমন্দির। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমাও পেয়েছে এই মন্দির। থাইল্যান্ড দাবি করে এই মন্দির তাদের। কাম্বোডিয়া তাতেই আপত্তি।
ইতিহাস বলছে, রাজা দ্বিতীয় উদয়াদিত্যবর্মণ এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। কাম্বোডিয়ার দাবি, এটি নবম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে খেমার রাজত্বের সময় থেকে ঐতিহাসিক সীমান্তরেখায় এই মন্দির অবস্থি ছিল। আবার থাইল্যান্ডের ব্যাখ্যা, এই মন্দির সুরিন প্রদেশে অবস্থিত।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত কাম্বোডিয়াকেই এই মন্দিরের মালিকানা দিয়েছে। কিন্তু এই নিয়ে ২০০৮ সাল থেকেই দুই দেশের মধ্যে সমস্যা চলছে। যার কোনও সমাধান হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে একটি বোঝাপড়া করেছে কাম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ড সরকার। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে কম্বোডিয়ার সেনা থাইল্যান্ডের সেনাকে চ্যালেঞ্জ করে বসে ওই এলাকায়। যদিও এপ্রিলের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হওয়ায় তখনকার মতো সমস্যা মেটে। কিন্তু ফের শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। এবার জল কোনদিকে গড়ায় সেটাই দেখার।
থাইল্যান্ড যাওয়া কি নিরাপদ?
গত বুধবার সীমান্তে গোলাগুলি চালায় কম্বোডিয়া। বদলা নিতে বৃহস্পতিবার এফ ১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে কম্বোডিয়ার সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় থাইল্যান্ড। পাল্টা কম্বোডিয়াও থাইল্যান্ডের ফ্যানম ডং রাক হাসপাতালে হামলা করেছে। থাইল্যান্ডের কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী ফুমথম বলেন, 'আমরা সমস্যার সমাধান করতে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে আত্মরক্ষা আমাদের করতেই হবে। দেশকে রক্ষা করাও আমাদের কর্তব্য।' জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বহু এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। থাই শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে সীমান্তবর্তী এলাকার স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। সীমান্ত লাগোয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে ফিল্ড হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ড যেতে ভয় পাচ্ছেন অসংখ্য পর্যটক। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও দেশের পক্ষ থেকেই কোনও ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি জারি করা হয়নি। ব্যাঙ্কক, ফুকেত, চিয়াং মাই, সিয়েম রিপ, পম্পের মতো জনপ্রিয় পর্যটন স্থলগুলি সংঘর্ষ কবলিত এলাকা থেকে বহু দূরে অবস্থিত। ফলে ফ্লাইট, হোটেল পরিষেবা এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সরকারি নির্দেশিকার দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে পর্যটকদের।