File Imege আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান সমুদ্র স্রোত ইউরোপ ও অনান্য কয়েকটি মহাদেশকে উষ্ণ রাখে। তবে তা ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। সেই সব এলাকা শীতল হতে শুরু করেছে। পৃথিবীর আবহাওয়ার জন্য এটা বড়সড় হুমকি বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। তাঁদের দাবি, যদি এই স্রোত বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সমগ্র ইউরোপ ফের হিমযুগে ফিরে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সর্বত্র বরফ দেখা যাবে।
আইসল্যান্ডের জলবায়ুমন্ত্রী জোহান পল জানান, এই স্রোত বন্ধ হয়ে গেলে তা সেই দেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। প্রতিটা দেশের সরকারের এটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা দরকার। যেহেতু আইসল্যান্ড উত্তর মেরুর ঠিক পাশে অবস্থিত সেই কারণে সেই এলাকা সবথেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
আটলান্টিক স্রোত কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? আটলান্টিক মেরিডিয়োনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন নামে পরিচিত। এই স্রোত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল থেকে আর্কটিকের দিকে উষ্ণ জল বহন করে। তা ইউরোপীয় শীতকালকে হালকা রাখে। তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে আর্কটিকের বরফ গলে যাচ্ছে। গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর থেকে ঠাণ্ডা জল সমুদ্রে প্রবাহিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ঠান্ডা জল স্রোতকে ব্যাহত করতে পারে। যদি AMOC ভেঙে পড়ে, তাহলে উত্তর ইউরোপে শীতের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে এবং তুষার ও বরফের ঝড় বাড়বে।
আইসল্যান্ডের উদ্বেগ: মন্ত্রী জোহানসনের দাবি, এই প্রথমবারের মতো কোনও নির্দিষ্ট জলবায়ু ঘটনাকে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জন্য অস্তিত্বগত হুমকি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সমস্ত মন্ত্রণালয় এখন সতর্ক এবং প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার গবেষণা, নীতি এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন। জোহানসনের মতে, সমুদ্রের বরফ জাহাজগুলিকে আটকে দিতে পারে। চরম আবহাওয়া কৃষি এবং মাছ ধরার ক্ষতি করতে পারে, যা আমাদের অর্থনীতি এবং খাদ্যের জন্য অপরিহার্য।
বিশ্বব্যাপী প্রভাব: কেবল ইউরোপ নয়, সমগ্র বিশ্ব এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। AMOC পতনের প্রভাব উত্তর ইউরোপের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে। বৃষ্টিপাতের ধরণের জেরে আফ্রিকা, ভারত এবং দক্ষিণ আমেরিকার কৃষকদের ক্ষতি হতে পারে। অ্যান্টার্কটিকায় উষ্ণতা তীব্র হতে পারে।
ফিনিশ মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী আলেক্সি নুমেলিন বলেন, কখন এমনটা হবে তা নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও সমাজের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
উত্তর ইউরোপের অন্যান্য দেশও সতর্ক রয়েছে। আয়ারল্যান্ডের আবহাওয়া বিভাগ প্রধানমন্ত্রী এবং একটি সংসদীয় কমিটিকে ব্রিফ করেছে। নরওয়ের পরিবেশ মন্ত্রণালয় নতুন গবেষণা পরিচালনা করছে। ব্রিটেন গবেষণার জন্য ৮১ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি টাকা বরাদ্দ করেছে।