হোয়াইট হাউসের 'ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনে'র উপদেষ্টা বোর্ডে নিযুক্ত হলেন দুই বিতর্কিত ব্যক্তি—ইসমাইল রয়্যার ও শেখ হামজা। এক্স-এ(টুইটার) এমনই দাবি করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক লরা লুমার। কিন্তু এঁদের বিতর্কিত বলা হচ্ছে কেন?
ইসমাইল রয়্যার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৩ বছর জেল খেটেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে আল-কায়দা ও লস্কর-ই-তইবার মতো সংগঠনকে সাহায্য করার অভিযোগ ছিল। ওয়াশিংটন পোস্ট সূত্রে খবর, ২০০৪ সালে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ব্যবহার ও প্রচারের দায় স্বীকার করে তিনি ২০ বছরের সাজা পান। শেষ পর্যন্ত ১৩ বছর জেল খাটেন রয়্যার।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রয়্যার 'ইসলামী ধর্মতত্ত্ব' নিয়ে গবেষণা করেছেন। বিভিন্ন ইসলামিক NGO-তে এক দশকেরও বেশি সময় কাজ করেছেন। ১৯৯২ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর লেখালিখি বহু প্রকাশনায় ছাপা হয়েছে। এমনকি ‘রিলিজিয়াস ভায়োলেন্স টুডে: ফেইথ অ্যান্ড কনফ্লিক্ট ইন মডার্ন ওয়ার্ল্ড’ বইতেও তিনি সহ-লেখক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০২৩ সালে মিডল ইস্ট ফোরামের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর 'জিহাদি' হওয়ার কাহিনীও শেয়ার করেন।
EXCLUSIVE:
— Laura Loomer (@LauraLoomer) May 17, 2025
🚨 Islamic JIHADIST who traveled to Pakistan to train in an Islamic terror camp and served a 20 year prison sentence in the US for Jihadi terrorist activities has now been listed as a member of the White House Advisory Board of Lay Leaders, Announced Today on the… pic.twitter.com/d1HHHGUFYX
লস্কর-ই-তইবার সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক? রয়্যার বলেছিলেন, 'লস্করের লোকদের আমার ভাল লাগত। আমি বিন লাদেনের বিরোধী ছিলাম। আমার মতে, আল-কায়দা লক্ষ্যভ্রষ্ট একটি গোষ্ঠী। আমাকে বলা হয়েছিল লস্কর চরমপন্থী নয়। বরং এদের ঝোঁক সৌদি ইমামের দিকে। আমি মুসলিমদের লস্করে যোগ দিতে উৎসাহ দিতাম এবং কাশ্মীরে প্রশিক্ষণ নিতে বলতাম। সেই প্রশিক্ষণ আসলে তেমন কঠিন ছিল না। বরং একধরনের 'পর্যটন'ই ছিল। পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো আর বন্দুক চালানোর অভিজ্ঞতা দেওয়া হত।'
ইসমাইল রয়্যার-শিক্ষকের ছেলের উগ্রপন্থার নেশা
সেন্ট লুইস শহরে জন্ম রয়্যারের। বাবা ছিলেন শিক্ষক, মা ফটোগ্রাফার। খুব অল্প বয়স থেকেই উগ্রবাদী চিন্তাধারার প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৯২ সালে ইসলাম গ্রহণ করে ইসমাইল নাম গ্রহণ করেন। এরপর বসনিয়ার শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করতেন। এরপর কাজ করেছেন CAIR (কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস)-এ। পরে বসনিয়ায় যুদ্ধেও অংশ নেন।
২০০০ সালে পাকিস্তানে গিয়ে লস্করের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমেরিকায় ফিরে এসে ভার্জিনিয়ায় মুসলিমদের সঙ্গে 'পেইন্টবল' গেম খেলতেন। তারপর তাঁদের জঙ্গি দলে যোগ দিতে উৎসাহ দিতেন। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পরে তিনি ভার্জিনিয়া জিহাদ নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন। এই নেটওয়ার্ক পেইন্টবল প্রশিক্ষণ ছাড়াও অস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য লস্কর ক্যাম্পে লোক পাঠাত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তালিবানের হয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই করা। ২০১৭ সালে রয়্যার জেল থেকে মুক্তি পান।
শেখ হামজা ইউসুফ
শেখ হামজা ইউসুফ ক্যালিফোর্নিয়ার জেইতুনা কলেজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ইসলামী সন্ত্রাসবাদে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করেছেন সাংবাদিক লরা লুমার। তাঁর মতে, ইউসুফ হামাস ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে যুক্ত।
৯/১১ ঘটনার দুই দিন আগে ইউসুফ জামিল আল-আমিনের জন্য একটি তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। আল-আমিনের বিরুদ্ধে এক পুলিশকর্মীকে হত্যার মামলা আছে। ইউসুফ সেই বক্তৃতায় আমেরিকাকে বর্ণবাদী দেশ বলেন এবং দাবি করেন আল-আমিনকে ফাঁসানো হয়েছে। পরে আল-আমিন দোষী সাব্যস্ত হন।
ইউসুফ বলেন, ১৯৯০-এর দশকে নিউইয়র্কে বিস্ফোরণ চেষ্টায় অভিযুক্ত শেইখ ওমর আবদেল-রহমানের বিচারও অন্যায্য ছিল। ৯/১১-র পরে এফবিআই ইউসুফকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি ব্রিটেনে ‘ব্রিটিশ ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও করেন এবং ইসরায়েলের কাছে ব্রিটেনের অস্ত্র বিক্রির বিরোধিতা করেন। তাঁর এই ভূমিকায় তাঁকে বিশ্বের ৫০০ প্রভাবশালী মুসলমানদের তালিকায় রাখা হয়েছে।
তাঁর অতীত সন্ত্রাসবাদী সংযোগ থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন তাঁকেও হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা বোর্ডে নিয়োগ করেছে।