F 35 যুদ্ধবিমান শুল্ক নীতি নিয়ে এবার নিজের জালেই প্য়াঁচে পড়লেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতিকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশের উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু, এই নীতিতে চলতে গিয়ে কমে গিয়েছে মার্কিন যুদ্ধ বিমান বিক্রি। ইতিমধ্যেই, বেশ কয়েকটি দেশ চলতি বছরে F-35 কেনার চুক্তি বাতিল বা স্থগিত করেছে। এর ফলে লকহিড মার্টিন কোম্পানিটি কোটি কোটি ডলার লোকসানের আশঙ্কায় ভুগছে। পাশাপাশি বহু আমেরিকানের চাকরিও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে।
ইট মারতে গিয়ে পাটকেল!
ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করেছিলেন পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ফলে আমেরিকা প্রভূত লাভবান হবে। কিন্তু এখন তা হিতে বিপরীত হচ্ছে। আসলে F-35-এর যন্ত্রাংশ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মার্কিন মুলুকে আসে। সেগুলির উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ হওয়ার ফলে আমেরিকার বন্ধু দেশগুলিও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। তারা অনেকেই F-35-এর বদলে রাফায়েল, ইউরোফাইটার বা গ্রিপেনের মতো ইউরোপীয় বিমান বেছে নিচ্ছে। যা F-35 এর রপ্তানি সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে।
কেন F-35 যুদ্ধ বিমানটি গুরুত্বপূর্ণ?
F-35 যুদ্ধ বিমানটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত স্টিলথ ফাইটার বিমান। লকহিড মার্টিন কোম্পানি এই ফাইটার যুদ্ধ বিমানটি তৈরি করে। মার্কিন সামরিক বাহিনী ছাড়াও, বর্তমানে বিশ্বের আরও ২০টিরও বেশি দেশ এই ফাইটার জেট ব্যবহার করে। এই বিমানটির দাম রয়েছে প্রায় ৮০-১০০ মিলিয়ন ডলার।
কোন কোন দেশ চলতি বছরে যুদ্ধ বিমান কেনা থেকে সরে এসেছে?
চলতি বছরের মার্চে পর্তুগাল প্রথম ৩৬টি F-35 জেট কেনার পরিকল্পনা বাতিল করে। বরং এর বদলে তারা বেছে নিয়েছে রাফাল বা গ্রিপেনের মতো ইউরোপীয় যুদ্ধ বিমানগুলিকে।
সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ভারতও F-35 যুদ্ধবিমান কেনা থেকে নিজেদের সরিয়ে এনেছে। বিশেষ করে ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে এই বিমানের দাম আরও বেড়ে গিয়েছে। তাই ভারত বর্তমানে দেশীয় প্রযুক্তি এবং উৎপাদনের উপর জোর দিচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে করা ৩৬টি জেটের জন্য ৯.১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিটিও বাতিল হয়েছে। ট্রাম্প ঘড়ি এবং চকোলেটের মতো সুইস পণ্যের উপর ৩৯ শতাংশ কর আরোপ করেছিলেন, যা পরে ১৫% এ কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু তাতে আর জেট চুক্তি ফিরে আসেনি।
স্পেনের সঙ্গেও আমেরিকার ৪৫-৫০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে চুক্তি হচ্ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে মত-পার্থ্যকের কারণে স্পেনও এই ডিল নিয়ে আর আগ্রহী নয়। বরং তারা ইউরোজেট বা ফিউচার কমব্যাট এয়ার সিস্টেম কিনবে বলে আগ্রহী।
কানাডাও ৭২টি জেটের চুক্তি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে। ৭২টির মধ্যে ১৬টি ইতিমধ্যেই সরবরাহ করা হয়েছে, কিন্তু ক্রমবর্ধমান খরচ এবং আমেরিকার প্রতি আস্থার অভাব এক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি করছে।
এছাড়াও, একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সুইডেনের সঙ্গেও। ফলে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির জেরে আমেরিকার F-35 যুদ্ধবিমানের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।