কানাডার জাস্টিন ট্রুডো সরকারের দুই পদস্থ কর্তা আমেরিকান সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে ভারতের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য ও সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করার কথা স্বীকার করেছেন। দ্য গ্লোবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রুডোর জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা উপদেষ্টা নাটালি ড্রোভিন এক সংসদীয় কমিটিকে বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা কানাডায় নিজ্জরের ওপর হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। ড্রোভিন বলেছেন যে এই গোপন তথ্য ফাঁস করার জন্য তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আসলে গোপনীয় তথ্য ফাঁস করা ছিল কৌশলের অংশ। তিনি এবং কানাডার উপ-বিদেশমন্ত্রী ডেভিড মরিসন নিশ্চিত করেছেন যে একটি বড় আমেরিকান সংবাদপত্র ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান কূটনৈতিক বিরোধের বিষয়ে অটোয়ার বক্তব্য পেয়েছে।
তিনি বলেন, এই কমিউনিকেশন স্ট্রাটেজি ওপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজর ছিল। এদিকে, ১৩ অক্টোবর ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল সিঙ্গাপুরে কানাডার এনএসএর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।
সংসদীয় কমিটি ড্রোভিন এবং মরিসনকে ভর্ৎসনা করেছে। কেন ট্রুডো, তাঁর মন্ত্রীরা এবং আরসিএমপি এই তথ্যটি সংবাদপত্রে হস্তান্তর করার পরিবর্তে জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি।
গত বছর পার্লামেন্টে বক্তৃতা দেওয়ার সময় জাস্টিন ট্রুডো খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার জন্য ভারতকে অভিযুক্ত করেছিলেন। এর পর ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যায়। সেই থেকে ভারত ও কানাডার সম্পর্ক উত্থান-পতনে পূর্ণ। ভারত ট্রুডো এবং তাঁর দলকে খালিস্তানিদের প্ররোচিত করে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কানাডার প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোডি থমাস বলেছিলেন যে নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কানাডাকে সহযোগিতা করছে ভারত।
গত বছরের জুনে কানাডার সারেতে একটি গুরুদ্বারের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয় নিজ্জরকে। নিজ্জর ছিল একজন খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী। খালিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান ছিল। সে গত কয়েক বছর ধরে কানাডায় বসবাস করছিল এবং সেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদে ইন্ধন জোগাচ্ছিল।
গোয়েন্দা সূত্রের মতে, নিজ্জর গত এক বছরে ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির জন্য আরও বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠেছিল। কারণ সে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের অপারেটরদের বিদেশে রসদ এবং অর্থ সরবরাহ শুরু করেছিল। ২০১৮ সালে যখন ট্রুডো ভারত সফর করেছিলেন। সেই সময়, পাঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং তাঁকে খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের একটি তালিকা দিয়েছিলেন, যাতে নিজ্জরের নামও ছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২০২০ সালে নিজ্জরকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করেছিল। ২০১০ সালে পাতিয়ালায় একটি মন্দিরের বাইরে বোমা বিস্ফোরণে তার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছিল। হিংসায় উস্কানি, সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের প্রচারসহ একাধিক মামলায় তাকে খুঁজছিল পুলিশ। তার মাথার দাম ১০ লক্ষ টাকা ঘোষণা করেছিল NIA।