২০২২ সালে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবকে প্রভাবিত করতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণেই এই পন্থা নিতে পারে আমেরিকা। দ্য ইন্টারসেপ্ট দ্বারা প্রাপ্ত একটি ফাঁস হওয়া পাকিস্তান সরকারের নথি অনুসারে এমনটাই জানা গেছে। দ্য ইন্টারসেপ্টের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২ সালের ৭ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ খান এবং ডোনাল্ড লু সহ দুই মার্কিন বিদেশ দফতরের কর্মকর্তাদের বৈঠকে কী ঘটেছিল তা ওই পাকিস্তানি নথিতে বর্ণনা করা হয়েছে। বৈঠকের একদিন পর ৮ মার্চ ইমরান খানের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা প্রস্তাব পেশ হয়। তারপর ১০ এপ্রিল খানকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়।
কী ছিল ফাঁস হওয়া নথিতে?
দ্য ইন্টারসেপ্টের প্রাপ্ত নথি অনুসারে, ইউক্রেনের বিষয়ে পাকিস্তানের নিরপেক্ষ অবস্থানের সমালোচনা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী বিদেশ সচিব ডোনাল্ড লু। নথিতে দেখা গেছে যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের সময় পরিস্থিতি সংশোধনের জন্য অনাস্থা ভোটের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। নথি অনুসারে, লু বলেছিলেন, 'এখানে এবং ইউরোপের লোকেরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন যে পাকিস্তান কেন এমন আক্রমণাত্মকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান নিচ্ছে (ইউক্রেনে), যদি এমন অবস্থান সম্ভব হয়। এটা আমাদের কাছে এমন নিরপেক্ষ অবস্থান বলে মনে হয় না।'
দ্য ইন্টারসেপ্ট-এর রিপোর্ট অনুসারে, তিনি তখন বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী বদল করা হলে ওয়াশিংটন সব ক্ষমা করে দেবে।' লু বলেছেন, 'আমি মনে করি যদি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সফল হয় তবে ওয়াশিংটনে সবাইকে ক্ষমা করা হবে। কারণ রাশিয়া সফরকে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত হিসাবে দেখা হচ্ছে।' দ্য ইন্টারসেপ্টের মতে, নথিতে দেখা গেছে যে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়েছে এই বলে যে তিনি আশা করেছিলেন যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের ক্ষতি করবে না। লু বলেছেন, 'আমি যুক্তি দেব যে এটি ইতিমধ্যে আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পর্কের মধ্যে একটি ফাটল তৈরি করেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় কি না তা দেখার জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করা যাক, যার অর্থ এই ইস্যুতে আমাদের বড় মতবিরোধ হবে না এবং সেই দাগ খুব দ্রুত কেটে যাবে।'
ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ভূমিকার অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায়, স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন যে অভিযোগগুলি মিথ্যা। তিনি বলেন, 'আমরা ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের দিনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খানের মস্কো সফর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং সেই বিরোধিতাকে প্রকাশ্যে এবং ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছি।'
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইমরান খানের অভিযোগ
দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে জেলে রয়েছেন ইমরান খান। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে একটি বিদেশি বাহিনী তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা সাজিয়েছিল। দাবির পক্ষে জনসভায় তিনি একটি নথিও তুলে ধরেছিলেন। এই বছরের জুলাই মাসে পাকিস্তানের ফেডারেল মন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছিলেন যে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান ইমরান খান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কূটনৈতিক নথি ব্যবহার করেছেন এবং স্বার্থের জন্য পাকিস্তান সরকারের ক্ল্যাসিফায়েজ নথি ব্যবহার করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হতে পারে।