মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কী হয়েছে? মানে সকালে এক কথা বলেন তো রাতে অন্য কথা। এতদিন বলে আসছিলেন, ইরানে আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেই-এর শাসন বদলে ফেলবে আমেরিকা। ইজরায়েল তো আগেই ঘোষণা করেছে, খামেনেইকে খতম করতে পারলেই যুদ্ধ শেষ। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ফের একবার অবস্থান বদলালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে ইরানের শাসকগোষ্ঠীকে সরিয়ে দেওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার সম্পূর্ণ বিপরীত সুরে জানালেন, তাঁর সরকার ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’ বা সরকার পতনের পথে হাঁটতে চায় না।
অবস্থান থেকে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন
ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নেদারল্যান্ডস যাওয়ার পথে, এয়ার ফোর্স ওয়ানের ভিতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, 'না, আমি কোনও সরকার বদল চাই না। যদি এমন কিছু ঘটেই যায়, সেটা আলাদা কথা। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য সেটা নয়। আমি চাই, সব কিছু যত দ্রুত সম্ভব শান্ত হয়ে যাক। সরকার বদল মানেই একরাশ বিশৃঙ্খলা। আমরা চাই না, সেই বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি তৈরি হোক।' এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কার্যত নিজের আগের অবস্থান থেকে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন। কারণ গত রবিবারই তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া Truth Social-এ লিখেছিলেন, 'রেজিম চেঞ্জ' শব্দটা বলা হয়তো রাজনৈতিকভাবে ঠিক নয়। কিন্তু যদি ইরানের বর্তমান সরকার 'মেক ইরান গ্রেট এগেন' করতে না পারে, তাহলে ওদের সরানোই তো স্বাভাবিক, নয় কি?
ট্রাম্প ঠিক কী চাইছেন, বোঝা যাচ্ছে না
এই পোস্ট ঘিরে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। কারণ তার আগেই আমেরিকা ও ইজরায়েল যৌথভাবে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে একাধিক বোমাবর্ষণ করে। ওয়াশিংটন দাবি করেছিল, এই হামলার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে থামানো,কোনওভাবেই সরকার বদল নয়। এমনকী, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ স্পষ্ট বলেন, 'আমাদের মিশনের লক্ষ্য কখনওই রেজিম চেঞ্জ ছিল না।' একই বক্তব্য ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সেরও।
ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ থামছে?
বিতর্কের আগুন কিছুটা থামাতে হোয়াইট হাউস থেকে পরে জানানো হয়, 'ইরানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন সে দেশের মানুষ। সরকার বদল আমাদের লক্ষ্য নয়।' এই অবস্থার মধ্যে ট্রাম্প একদিকে যেমন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন, অন্যদিকে তাঁকেই আবার দেখা গেল ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সদ্য শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি রক্ষা করতে মরিয়া। মঙ্গলবার Truth Social-এ তিনি লেখেন, 'যুদ্ধবিরতি চলছে।' যদিও একই দিনে তেহরানে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। ইজরায়েল দাবি করে, তারা ইরানের একটি রাডার সিস্টেমে হামলা চালিয়েছে, কারণ ইরান যুদ্ধবিরতির পরও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। কিন্তু তেহরান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ন্যাটো সম্মেলনের আগে ট্রাম্প বলেন, 'আমার এখন ইজরায়েলকে শান্ত করতে হবে। ইরান আর ইজরায়েল এত দিন ধরে একে অপরকে আঘাত করেছে যে, ওরা নিজেরাও জানে না কী করছে।” এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'দু’পক্ষই যুদ্ধ থামাতে চায়।'