প্রায় সাত বছর পর ফের অচলাবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে শুরু হয়েছে ফেডারেল শাটডাউন। বাজেট অনুমোদন না হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটে ফেডারেল তহবিল বৃদ্ধির প্রস্তাব পাসের জন্য ৬০ ভোট প্রয়োজন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটি দাঁড়ায় ৫৫–৪৫। নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়েছে শাটডাউন।
রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পরিস্থিতির জন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, প্রয়োজনে ফেডারেল কর্মচারীদের ব্যাপক ছাঁটাই শুরু করা হতে পারে।
শাটডাউনে কী কী বন্ধ থাকবে?
এই শাটডাউনের ফলে মার্কিন সরকারের বহু দপ্তরের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে পুলিশ, হাসপাতাল, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণের মতো জরুরি পরিষেবাগুলি চালু থাকবে। অন্যদিকে জাতীয় উদ্যান, জাদুঘর, অভিবাসন দপ্তরের কাজ, পার্ক এবং বহু সরকারি অফিস বন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা সীমিত সময় কাজ করবে।
পাসপোর্ট ও ভিসা প্রদানে দেরি হবে। সামাজিক নিরাপত্তা (Social Security), মেডিকেয়ারসহ একাধিক পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে। ফেডারেল ওয়েবসাইট ও হেল্পলাইন পরিষেবাও বন্ধ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
কর্মচারীদের অনিশ্চয়তা
কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের (CBO) হিসেব অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ৭,৫০,০০০ ফেডারেল কর্মচারীকে ছুটিতে পাঠানো হতে পারে। এতে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হবে। অনেক কর্মচারীর বেতন আপাতত আটকে যাবে, পরে দেওয়া হলেও অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে।
২০১৮-১৯ সালের আংশিক শাটডাউনে প্রায় ৩,৪০,০০০ কর্মচারীকে বেতন ছাড়াই ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। এবার সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা।
অর্থনীতিতে প্রভাব
শাটডাউনের কারণে ছোট ব্যবসা ও ঠিকাদাররা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বেন। সরকারি কন্ট্রাক্টে কাজ করা সংস্থাগুলিকে অর্থপ্রদান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ২০১৩ সালের শাটডাউনের সময় লকহিড মার্টিনকে প্রায় ৩,০০০ কর্মচারীকে ছুটিতে পাঠাতে হয়েছিল।
আমেরিকান ট্র্যাভেল অ্যাসোসিয়েশনের অনুমান অনুযায়ী, পর্যটন খাতে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে। বিমান পরিবহনে নিরাপত্তা পরীক্ষা ব্যাহত হলে এবং এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলারের অভাব দেখা দিলে ভ্রমণ পরিকল্পনা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতীতের অভিজ্ঞতা
১৯৯৫ সালে প্রথমবার মার্কিন শাটডাউন হয়েছিল। এরপর একাধিকবার এর পুনরাবৃত্তি হয়েছে। সবচেয়ে দীর্ঘ শাটডাউনটি হয়েছিল বিল ক্লিনটনের সময়, ৩৫ দিন ধরে। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে তিনটি শাটডাউন হয়েছিল।
এইবারও শাটডাউনের প্রভাব ব্যাপক হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, ব্যবসা ও সাধারণ নাগরিকের জীবনে এর নেতিবাচক ছাপ পড়বে।