
ভারতে এসে পৌঁছেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি দিল্লিতে পা রাখেন। প্রোটোকল ভেঙে তাঁকে দিল্লিতে বিমানবন্দরে গিয়ে স্বাগত জানান খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সফরের আগেই পুতিনের মুখোমুখি হয়েছিলেন আজতক-এর ম্যানেজিং এডিটর অঞ্জনা ওম কাশ্যপ এবং ইন্ডিয়া টুডে-র ফরেন অ্যাফেয়ার্স এডিটর গীতা মোহন। এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে পুতিন নানাবিধ ইস্যু নিয়ে নিজের মন্তব্য প্রকাশ করেন। তালিকায় অবশ্যই ছিল রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। গোটা দুনিয়া এই যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের চিন্তাভাবনা জানতে আগ্রহী ছিল, সে কথাই এক্সক্লুসিভ এই সাক্ষাৎকারে শেয়ার করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কী বললেন পুতিন?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'আপনার নজরে কি এই যুদ্ধে রাশিয়া জয়ী? রেড লাইন কী কী? আপনি আগেই স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, রাশিয়া তখনই হাতিয়ার সমর্পণ করবে যখন কিভ নির্দিষ্ট করে দেওয়া অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। সেই অঞ্চলগুলি কী কী?'
জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, 'বিষয়টি জেতার নয়। রাশিয়া আত্মরক্ষা করছে, করবেও। রাশিয়া জনগণের স্বার্থকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেয়। এটাই আমাদের মূল্যবোধ। রুশ ভাষা এবং সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনে রুশ অর্থোডক্স চার্চ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গির্জাগুলিকে বলপূর্বক দখল করে রাখা হয়েছে। একাধিক মানুষকে সেখান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ফলত এটা ধর্ম এবং আস্থারও বিষয়। রুশ ভাষার উপর যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে, সে বিষয়টি তো আমি আলাদা করে উত্থাপন করছিও না। আশলে গোটা বিষয়টিই খুব জটিল এবং বৃহত্তর ইস্যু।'
পুতিনের সংযোজন, 'আমি আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই, রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করার মতো দেশ নয়। পশ্চিমের দেশগুলি ইউক্রেনের সঙ্গে জোট বাঁধে, ওখানে শাসক বদল করে এবং তারপর একের পর এক ঘটনা ঘটল। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এবং ডোনবাসে। যেগুলি নিয়ে কখনও চর্চা হয়নি। ৮ বছর ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে ইস্যুটিকে সমাধান করার চেষ্টা করেছিলাম। মিনস্ক শান্তিপূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চেয়েছিলাম। পরে জানতে পারলাম পশ্চিমের শক্তিগুলি ওই অঞ্চলে কখনওই শান্তি চায়নি। এই মিনস্ক সমঝোতা সম্পন্ন করার কোনও মানসিকতাই ওদের ছিল না। ইউক্রেনের কাছে হাতিয়ার সরবরাহ করার জন্যই ওই সমঝোতা চুক্তিতে সই করা হয়। আমাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করারই পরিকল্পনা ছিল ওদের।'
কবে শেষ হবে যুদ্ধ?
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, 'ডোনবাসের মানুষদের উপর অত্যাচার হয়েছে ৮ বছর ধরে। হত্যা করা হয়েছে একাধিককে। এদের বিষয়ে পশ্চিমী দুনিয়া কোনও গুরুত্বই দেয়নি। প্রথম সেখানকার জনগণকে মান্যতা দিয়ে হয়েছে আমাদের। এখন যে বিশেষ সেনা অভিযান করা হল তা যুদ্ধ নয়। আসলে এটা সেই দীর্ঘদিনের যুদ্ধের সমাধানের প্রয়াস। পশ্চিমের দেশগুলি ইউক্রেনের হাতে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছ। এটাই সত্য। বিবাদের মূলে এটাই আসল কারণ।' সেক্ষেত্রে কবে শেষ হবে যুদ্ধ? পুতিন বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেলে তবেই যুদ্ধ থামবে। বিশেষ সেনা অভিযানের শুরুতে যে লক্ষ্য নির্ধারিত করেছিলাম, সেই সমস্ত অঞ্চলগুলিকে স্বাধীন করে তবেই সংঘর্ষ থামানো হবে।'
ইউক্রেনে পুতিনের লক্ষ্য কী?
ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের লক্ষ্য কী? জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, '৮ বছর ধরে আমরা নিজেদের স্বতন্ত্র রাজ্য ঘোষণা করা অঞ্চলগুলিকে মান্যতা দিয়েছি। ৮ বছর ধরে ওরা নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছিল। আমরা চেষ্টা করে গিয়েছি যাতে কোনও ভাবেই যাতে ইউক্রেনের সঙ্গে এই স্বাধীন অঞ্চলগুলির কোনও বিবাদ না বাধে। পরবর্তীতে যদিও আমরা বুঝতে পারি, এমনটা অসম্ভব। ওদের তো তিলে তিলে শেষ করা হচ্ছে আসলে।'
পুতিনের আরও বক্তব্য, 'একপ্রকার বাধ্য হয়েই আমরা ওই অঞ্চলগুলিকে মান্যতা দিয়েছি। সোভিয়েত আমলে যা ছিল এবং স্বতন্ত্র ইউক্রেন তৈরির পর যে প্রশাসনিক সীমান্ত তৈরি হয়েছিল, সেগুলিকেই মান্যতা দিতে হয় আমাদের। সেই অঞ্চলের বাসিন্দারা রেফারেন্ডাম দিয়ে জানায়, সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। ওরা যুদ্ধই বেছে নেয়। মামলা এখন স্পষ্ট এবং কোনও ওরা একটাই জায়গায় এসে আটকে রয়েছে। হয় সেনা দিয়ে আমরা ওই এলাকা মুক্ত করব, নয় ইউক্রেন সেনা নিজে থেকেও সরে যাবে। ওই অঞ্চলগুলি থেকে সেনা প্রত্যাহার করা এবং হত্যালীলা বন্ধ করা হোক, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।'
ইন্ডিয়া টুডে-র ফরেন অ্যাফেয়ার্স এডিটর গীতা মোহন বলেন, 'সামরিক অভিযানের সময়ে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক,ঝাপোরঝিয়া এবং খেরসনের মানুষ কিভের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।' পুতিন বলেন, 'উত্তরটি খুবই সহজ। ওই এলাকাগুলি কিভের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। যে সব এলাকা ছিল না সেগুলি কিভ ধ্বংস করে দিয়েছিল। বাধ্য য়েই আমাদের তাদের সমর্থন করতে হয়।'
জেলেনস্কি সম্পর্কে পুতিনের ধারণা কী?
পুতিনের কথায়, 'জেলেনস্কি যখন ক্ষমতায় আসেন, তিনি বলেছিলেন, যে কোনও মূল্যে শান্তি প্রতিষ্টার চেষ্টা করবেন। এখন সবকিছু ভিন্ন। তিনি উগ্র ফ্যাসিস্টদের সাহায্যে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন। এরা নব্য নাৎজি। এই কারণেই যুদ্ধের মতো পরিবেশ তৈরি হয়। তাঁর বোঝা উচিত প্রতিটি সমস্যা কেবলমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যায়। ২০২২ সাল থেকে তাঁকে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু তিনিই জানেন, তিনি কী করতে চান।'