'প্রতিবেশী প্রথম'। সন্দেহাতীতভাবে এটাই যে কোনও দেশের বিদেশনীতির ভিত্তি। ভারতের ক্ষেত্রে পড়শিদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এখন চলছে টানাপোড়েন। এমন সময় ভারত এবং তালিবানের মধ্যে একটি নতুন সম্পর্কের সূচনা হতে চলেছে। সম্প্রতি দুবাইতে তালিবানের ভারপ্রাপ্ত বিদেশরমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্ত্রি। এই বৈঠক নিয়ে শুরু হয়ে বিতর্ক। ভারত কেন তালিবানের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ? এই সম্পর্কের অর্থ কী? এর সুবিধা কী কী? আর অসুবিধাই বা কী?
ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্ক সবসময়ই জটিল। যখনই সে দেশে তালিবানের উত্থান হয়েছে, দূরত্ব বজায় রেখেছে ভারত। ২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতা দখলের পরও একই অবস্থা দেখা গিয়েছিল। নয়ের দশকেও তালিবানরা কাবুল দখল করেছিল। স্বাভাবিকভাবে তালিবানের সঙ্গে নয়াদিল্লির বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কূটনৈতিক মহলের মতে, আফগানিস্তানের তালিবান সরকার অনেক দেশই স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে ভারতও।
ভারত কেন বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এবং তালিবান সরকারের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট, এখন এই অঞ্চলের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে নয়াদিল্লি। তালিবানরা আফগানিস্তান দখল করার আগে ভারত দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে সামরিক প্রশিক্ষণ, নানা ধরনের বৃত্তি এবং একটি নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু তালিবান সরকার আসার পর সম্পর্ক থমকে গিয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের অহিনকুল। আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে। 'শত্রুর শত্রুর বন্ধু'- এই দৃষ্টিকোণ থেকেও তালিবানকে পাশে চাইছে নয়াদিল্লি। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এই সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে তালিবানও। জানা গিয়েছে, ভারত সরকার ও তালিবানের আলোচনায় ইরানের চাবাহার বন্দরের বাণিজ্য নিয়ে কথা হয়েছে। ভারতের কৌশলগত ও কূটনৈতিক স্বার্থের জন্য এই বন্দরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিদেশমন্ত্রী কী বললেন?
২০২৩ সালে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ভারতীয় সংসদে বলেছিলেন,'আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক যোগ রয়েছে'। ঘটনা হল, দিল্লি এবং কাবুলের মধ্যে সম্পর্ক চিরকালই মধুর। আফগানরাও ভারতীয়দের পছন্দ করেন।
পাকিস্তানের বাধা সরবে- গত কয়েকদিনে পাকিস্তান এবং তালিবানের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। দু'জনেই পরস্পরের উপর হামলা চালিয়েছে। সম্প্রতি একাধিক তালিবান শাসিত এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসলামাবাদ। বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ভারতের লক্ষ্য হল দুই দেশের মধ্যে সংযোগ জোরদার করা এবং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন। মধ্য এশিয়ায় পৌঁছানোর জন্য ভারতের সরাসরি কোনও রুট নেই। মধ্য এশিয়ায় পৌঁছানোর জন্য পাকিস্তান হয়ে যেতে হবে ভারতকে। কিন্তু নয়াদিল্লির সেই অনুমতি নেই। এক্ষেত্রে তালিবান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মাথাব্যথার কারণ বাংলাদেশ- শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন নিম্নগামী। বাংলাদেশের ইউনূস সরকারে পাক-প্রীতিও কারও নজর এড়ায়নি। এমতাবস্থায় আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি সময়ের দাবি।
এই বন্ধুত্বে একেবারে মসৃণ নয়
আফগানিস্তানে মানবাধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নের মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ তালিবানি সরকার। তালিবানিরা কতটা ভরসাযোগ্য হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকাটাও স্বাভাবিক। এদিকে, নারীদের উপর অত্যাচার হলেও তার বিরোধিতা সম্ভব নয়।
কিন্তু এটা বলা অত্যুক্তি নয় যে তালিবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় সুবিধা পাবে ভারতই।