বাঙালি ভোজন রসিক। আর বর্ষার মরশুমে আমরা হাপিত্যেশ করে বসে থাকি ওপার বাংলা থেকে কবে ইলিশ আসবে তার জন্য। এবছর বর্ষা চলে এলেও এপার বাংলায় তেমন দেখা মিলছে না পদ্মার ইলিশের। তবে এই আফসোস কেবল পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরই নয়। বাংলাদেশি ইলিশের জন্য বিখ্যাত পদ্মা ও মেঘনাতেও নাকি দেখা নেই জলের রুপোলি শস্যের।
খোকা ইলিশ ধরা বন্ধ করতে গত মার্চ-এপ্রিল টানা দুই মাস নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৩ জুলাই থেকে জেলেরা নদীতে নামলেও অনেকটা খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। কাঙ্খিত পরিমাণ ইলিশের দেখা মিলছে না।
মৎস্যজীবীদের দাবি , এ বছর ইলিশ ধরার শুরুতেই গত বছরের মত এখনো বড় আকারের মাছ ধরা পড়েনি। গত কয়েকদিন ধরে যে মাছ ধরা পড়েছে মৎস্যজীবীদের জালে, সেগুলো মাঝারি ও ছোট আকারের। যার কারণে এ সব মাছের বাজার দর ও চাহিদাও অনেক কম থাকে, তাই মৎস্যজীবীদের লোকসানের ভয়ও বেশি।
ভরা বর্ষণে অন্যান্যবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ইলিশে ছয়লাপ হয়ে যেত। এমনকি মহানগরের রাজপথেও বসত ইলিশের বাজার। এবার সেই দৃশ্য চোখে পড়ছে না। যৎসামান্য যে ইলিশ আসছে তা বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে। আর সেই ইলিশও বিক্রি হচ্ছে আগুন দামে।
চট্টগ্রামের ইলিশের তেমন স্বাদ নেই। তাই ভোজনরসিকদের কাছে এই ইলিশের তেমন কদর নেই। এছাড়া বরিশালে যে ইলিশ ওঠে, তা অধিকাংশ সাগরের। তাই কাঙ্খিত স্বাদ মেলে না। বাংলাদেশি ইলিশের প্রকৃত স্বাদ মেলে ফরিদপুর ও চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় ধরা পড়া ইলিশে। কিন্তু এ বছর এই দুই জেলাতেই ইলিশের খরা চলছে।
মাছের নদী মেঘনাতেও এবার মিলছে না কাঙ্ক্ষিত রুপোলি ইলিশ। নদীতে ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে এ বছর অতি খরা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও নাব্যতা সঙ্কটকে দায়ী করছেন গবেষকরা। এদিকে ইলিশ না ওঠায় খরচ চালাবেন কি করে বুঝে উঠতে পাচ্ছেন না প্রায় পঞ্চাশ হাজার মৎস্যজীবী।
দিনরাত জাল ফেলেও ইলিশ না পেয়ে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার জেলেদের। মাছ নেই তাই আর্থিক সংকটে পড়ে হতাশায় ভুগছেন জেলেরা। অধিকাংশ সময়ই শূন্য হাতে জাল-নৌকা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের। যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়ে তাতে নৌকার খরচই উঠে না। তবে আশার কথা শোনাচ্ছেন ইলিশ গবেষকরা। বলছেন, এখন পর্যাপ্ত ইলিশ জালে ধরা না দিলেও, কিছু দিন পরে ঠিকই কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা পাবেন জেলেরা।
স্থানীয় নদীর ইলিশ সরবরাহ না থাকলেও ভোলা, বরগুনা হাতিয়া-সহ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশে সরগরম চাঁদপুরের বড়স্টেশন মাছ ঘাট। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ’ মণ ইলিশ আসছে এই ঘাটে। তবে, সেসব ইলিশের স্বাদ কম থাকায় দামও কিছুটা কম বলে জানাচ্ছেন ইলিশ ব্যবসায়ীরা।