গত কয়েক বছের ইলিশ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশই উৎপাদিত হচ্ছে এই দেশে।
অথচ পাঁচ বছর আগেও বিশ্বের মোট ইলিশের উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ আসত বাংলাদেশ থেকে। সরকারের নানা কার্যকর পদক্ষেপের ফলে ধারাবাহিকভাবে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সেই তুলনায় প্রতিবেশী ভারত, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে ইলিশের উৎপাদন কমেছে। গতবছর সেপ্টেম্বরে মৎস্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভারতে। তাতেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।
ওয়ার্ল্ডফিশের তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে ইলিশের উৎপাদন কমেছে। বাংলাদেশের পরেই ইলিশের উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে ভারত। কিন্তু গত ছয় বছরে বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশ ইলিশ উৎপাদিত হতো। তবে গত বছর এদেশে ইলিশ উৎপাদন প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশে নেমেছে।
ইলিশ উরপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মায়ানমার। দেশটিতে ৩ শতাংশের মতো উৎপাদন হয়েছে গতবছর। এছাড়া ইরান, ইরাক, কুয়েত ও পাকিস্তানে বাকি ইলিশ মেলে।
বাংলাদেশে কীভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়ল তা নিয়ে সেদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম দাবি করেন, মা ও জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ করায় এই সাফল্য এসেছে। ইলিশ ধরার জালের আকৃতি নতুনভাবে নির্ধারণ করায় ভবিষ্যতে আরো বাড়বে ইলিশের উৎপাদন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রতিবছর ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে এই মাছ ধরা বন্ধ থাকে বাংলাদেষে। এ কর্মসূচিও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে সেদেশে।
এদিকে ওয়ার্ল্ডফিশ, মৎস্য অধিদফতর ও মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ধু পরিমাণের দিক থেকেই নয়, আকৃতির দিকে থেকেও কোনও দেশ বাংলাদেশের ইলিশের ধারেকাছে নেই।
দুই বছর ধরে বাংলাদেশে বড় ইলিশের পরিমাণ দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। আগে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বাজারে খুব কমই দেখা যেত। দামও মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে ছিল না। গত বছর বাজারে প্রচুর পরিমাণে বড় ইলিশ বিক্রি হয়েছে । শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে ইলিশের ওজন ও আকার বাড়ছে।
সাগর ও নদ-নদীতে ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজন গত তিন বছরে ৩৫০ গ্রাম বেড়েছে। গত বছর সাগর ও নদীতে ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজন পাওয়া গেছে ৮৫০ থেকে ৯০০ গ্রাম। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মাছবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
পরিসংখ্যান বলছে ২০১৬ সালে মোট ইলিশের ৩ শতাংশের ওজন ছিল এক কেজির ওপর। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ৫ শতাংশে। আর ২০১৯ সালের অগাস্টে ১০ শতাংশের ওজন ছিল এক কেজির ওপরে।
তবে এবার চিত্রটা গত কয়েক বছরের তুলনায় কিছুটা বদলেছে। এবার ভরা মরশুমেও ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে।
নদী সাগর থেকে কিছু ইলিশ আসলেও দাম চড়া। মাছের সরবরাহ কম থাকায় আয় রোজগার হারিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন মৎস্যজীবীরা। গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরা ট্রলারগুলো শূন্য হাতে ফিরে আসায় বাজারে ইলিশের ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। তবে আগামী দিনগুলোতে প্রচুর ইলিশ সরবরাহ হবে বলে আশা করছেন তারা।