scorecardresearch
 
Advertisement
বাংলাদেশ

Flood In Bangladesh: ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা, জলবন্দি দশ লক্ষ মানুষ

ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 1/12

টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায়। জলবন্দি হয়ে পড়েছেন দশ লাখ মানুষ। তিন শতাধিক বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। বন্ধ করা হয়েছে এ অঞ্চলের একমাত্র বিমানবন্দর সিলেট এম এ জি ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনীকে। 

শুক্রবার সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাই জলের তলায় তলিয়ে গিয়েছে। জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলারও বিস্তীর্ণ এলাকাও জলবন্দি। জল বাড়ছে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায়। সিলেটের অনেক এলাকা এখন জলের নীচে।

ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 2/12

সিলেট জল উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে জল বিপদসীমার ১.৮ সেন্টিমিটার এবং সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর জল বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। জলের স্তর বেড়েছে কুশিয়ারা ও লোভা নদীরও। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপরে বইছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, সিলেট জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য ৪৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে; দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৯টি উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার জলে তলিয়ে গেছে বলে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল জানিয়েছেন।

ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 3/12

সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যার কারণে সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ইতিমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- সিলেটে এ বছর ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন পরীক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। ১৪৯ পরীক্ষা কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সিলেট জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “এ পর্যন্ত জেলায় ২৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জল উঠেছে। এসব বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা জলে তলিয়ে যাওয়ায় এগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. ওয়াদুদ।

Advertisement
ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 4/12

বন্যার জল ঢুকে পড়েছে সিলেটের কুমারগাওয়ের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রেও। এই উপকেন্দ্র দিয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ইতিমধ্যে সিলেটের পুরো কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও গোয়াইঘাট উপজেলা এবং নগরীর উপশহরসহ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সুরঞ্জিত সিংহ বলেন, “কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে জল প্রবেশ করেছে। যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করতে বেশি সময় লাগবে না। যদি কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করে তাহলে এই গ্রিড উপকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে। এই গ্রিড বন্ধ করলে পুরো সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।”

নগরীর ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, শামীমাবাদ, ডহর, তালতলা, কালিঘাট, সোবহানীঘাট, শাহজালাল উপশহর, তেররতন, হবিনন্দি, সাদিপুর, বোরহানবাগ, শিবগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার কদমতলিসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এসব এলাকার অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।

ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 5/12

সুনামগঞ্জ কার্যত বিচ্ছিন্ন, আশ্রয় খুঁজছে মানুষ

সুনামগঞ্জের বন্য পরিস্থিতিও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কার্যত অন্যান্য জেলার সাথে বন্ধ হয়ে গেছে এ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, “সেনাবাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে সিলেটে কাজ শুরু করেছেন। সুনামগঞ্জেও দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীকেও কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন।”

ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 6/12

ভারতের মেঘালয়-অসমে প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্যে উঁচু থেকে নেমে আসা জলে বৃহস্পতিবার বিকালে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জ পৌরশহর। দুর্ঘটনা এড়াতে তখন থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে শহরের বাসিন্দাদের বৃহস্পতিবার রাত কেটেছে অন্ধকারে। সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারা, শান্তিগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলা এখন পানিতে ভাসছে। সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্কও কাজ করছে না। সব দোকানপাট প্লাবিত হয়ে নিত্যপণ্য ও ওষুধসহ নানা পণ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে সহযোগিতা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে মানুষের জন্য। 

ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 7/12

এদিকে বৃহস্পতিবার থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জ জেলায়। শুক্রবারও বৃষ্টি চলবে বলে আভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস। তাতে সুনামগঞ্জের পাশাপাশি সিলেট ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।  সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহম্মদ জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, “আকস্মিক এই বন্যা আমাদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে। শুধু জেলা শহর নয়, ছয়টি উপজেলা এখন জলের নীচে। মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসাসহ সহায়তায় কাজ করছে প্রশাসন। কিন্তু পরিস্থতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।” 

Advertisement
ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 8/12

দুর্গতদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরাও। কিন্তু সব রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় খুব বেশি কিছু তারাও করতে পারছেন না। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, বন্যার জল ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্রে প্রবেশ করায় নিরাপত্তার স্বার্থে ওই উপকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। সে কারণেই ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ।

ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 9/12

নেত্রকোণার ৩ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত

নেত্রকোণার তিনটি উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা বন্যার জলে প্লাবিত হয়েছে। নেত্রকোণা জল উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত জানান, শুক্রবার জেলার সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার, উব্ধাখালি নদীর জল বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ও ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ ছাড়াও জেলার সব কটি নদ নদীর জল হু হু করে বেড়ে চলেছে। বন্যার পানি বাড়তে থাকায় স্থানীয় প্রশাসন জলবন্দী মানুষদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন। তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করছে প্রশাসন। এদিকে শুক্রবার ভোর থেকে জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্রা উপজেলায় বন্যার জল ঢুকে প্লাবিত হয় বলে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান। তিনি বলেন, বারহাট্টার একাংশ প্লাবিত হয়েছে।

ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 10/12

তাৎক্ষণিকভাবে কতগুলো ইউনিয়নে কতজন মানুষ আটকে রয়েছেন, তার হিসেব এখনও করা যায়নি। তবে দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে জলবন্দি নেত্রকোণার তিন উপজেলা। এদিকে বন্যা কবলিত মানুষেরা জানান, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা সদরে বাসাবাড়িতে জল ঢুকেছে। উপজেলা দুইটির নিম্নাঞ্চল ছাড়াও উঁচু এলাকাগুলোতেও হু হু করে বন্যার জল ঢুকছে। গারো পাহাড়ি অঞ্চল  দুর্গাপুরও কলমাকান্দার দুর্গম এলাকায় এখনও প্রশাসনের সহায়তা পৌঁছায়নি।

বন্যা কবলিতদের জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক বলেন, আপাতত প্রশাসন এসব মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ৫০ মেট্রিকটন চাউল, ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দুর্গাপুর ও কলমাকান্দায় ২০ মেট্রিকটন করে চাউল, ২০০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার ও ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দে্ওয়া হয়। এছাড়া বারহাট্টায় ১০ মেট্রিকটন চাল ও ১০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা জানান।

ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 11/12

উদ্ধার ও ত্রাণকাজে সেনাবাহিনী

তিন জেলায় উদ্ধার ও ত্রাণকাজে সেনা সদস্যদের মাঠে নামানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। শুক্রবার  তিনি বলেন, “প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষকে উদ্ধার করা এবং নিরাপদে নিয়ে আনা। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।”  সেনাবাহিনীর কতজন সদস্য এ কাজে অংশ নিচ্ছেন, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানাতে পারেননি বিভাগীয় কমিশনার। তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে সিলেটে কাজ শুরু করেছেন। সুনামগঞ্জেও দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীকেও কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন।”

Advertisement
ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশের  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ জেলা
  • 12/12

বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ
 
ভয়াবহ বন্যার মধ্যে রানওয়ের কাছে বন্যার আসার পর সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ জানান, শুক্রবার থেকে তিন দিন এই বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট ওঠানামা করবে না। তিনি জানান, বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি বন্যার পানি চলে এসেছে। এছাড়া সিলেটজুড়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় তিন দিনের জন্য বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Advertisement