বছর ঘুরে আবার এলো বাংলা নববর্ষ। পদ্মার এপারের বাঙালিরা শুক্রবার নববর্ষ উদযাপন করলেও বাংলাদেশের মানুষ একদিন আগেই তার স্বাদ পেয়ে গেল।
বৃহস্পতিবার ঢাকা-সহ বাংলাদেশ জুড়ে নববর্ষ ১৪২৯ -কে স্বাগত জানান হল। বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করা হয়। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছাবাক্য হলো ‘শুভ নববর্ষ’।
নববর্ষের সময় বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে ‘মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে।
গত দু' বছর করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি, তবে এবার বাংলা ১৪২৯ সালের প্রথম দিন সাড়ম্বরে উদযাপিত হল ঢাকায়।
'নির্মল করো মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে' শ্লোগানে কঠোর নিরাপত্তায় বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ এর ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকায়। সকাল ৯টায় শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্য চত্বর থেকে শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি টিএসসি-ভিসি বাংলো সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন মোড় ঘুরে আবার একই স্থানে গিয়ে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পেয়েছে।
মহামারির মন্দ সময় পেরিয়ে জীবনের চেনা ছন্দে ফিরছে বাংলাদেশ,দু’বছর পর বাংলা বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা ফিরেছে বদলে যাওয়া পথে। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের কাজ চলায় শাহবাগ থেকে টিএসসির চেনা পথ বদলে ঢোলের বাদ্যে শোভাযাত্রা এবার এগিয়েছে টিএসসি থেকে নীলক্ষেতের দিকে।
অসাম্প্রদায়িক এবং মানবিক বাংলাদেশের প্রত্যয় এসেছে বর্ষবরণের ঐতিহ্য হয়ে ওঠা বৈশাখীর এই আয়োজনে। সকালে রমনার প্রভাতী আয়োজন শেষ হতে হতেই চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রার প্রস্তুতিও সারা হয়ে যায়। সকাল ৯টা ১ মিনিটে টিএসসির সড়ক দ্বীপের সামনে থেকে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে শুরু হয় মঙ্গলের যাত্রা। ভিসি চত্বর ঘুরে আবার একই জায়গায় এসে তা শেষ হয়।
বৈশাখী সাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের এই শোভাযাত্রায় সামনে-পেছনে বাদ্যের তালে তালে চলে নৃত্য, হাতে হাতে ছিল বাহারি মুখোশ। পুষ্পাকৃতির চরকি, টেপা পুতুল আর পাখির শিল্পকাঠামো শোভাযাত্রাকে দেয় বাঙালির চিরায়ত আবহ।
করোনাভাইরাস মহামারিতে ২০২০ সালে বর্ষবরণের আয়োজন গুটিয়ে যাওয়ায় মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়নি। ২০২১ সালেও পরিস্থিতি পক্ষে ছিল না, মঙ্গল শোভাযাত্রা হলেও তা ছিল প্রতীকী, সেখানে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না।
ভাইরাসের দাপট কমে আসায় এবার বিধি-নিষেধের বেড়াজাল উঠেছে, তাই ভোরের আলো ফুটতেই বৈশাখী সাজে নানা বয়সী মানুষ জড়ো হতে থাকে রমনা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। অল্প সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস পরিণত হয় লাল-সাদা জনস্রোতে।
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যে। পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও সোয়াটের সদস্যরা অস্ত্র হাতে সামনে-পেছনে গড়ে তোলেন নিরাপত্তা বলয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসির সদস্যরাও ছিলেন তাদের সঙ্গে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার আয়োজনে পয়েলা বৈশাখে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা নগরে বর্ষবরণের অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে অনেকদিন ধরে। বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধারণ করে কূপমণ্ডুকতা, গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবেও দেখা হয় এই কর্মসূচিকে।