মা যশোরেশ্বরীর চরণে মোদী, জানেন এই মন্দিরের বিশেষত্ব

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দুই দিনের  সফরে ঢাকা গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সফরের দ্বিতীয় দিন মোদীর প্রথম গন্তব্য ছিল সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালী মন্দির। শনিবার সকাল ১০টার আগে আগে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে শ্যামনগরে পৌঁছন নরেন্দ্র মোদী। এ সোবাহান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বানানো হ্যালিপ্যাডে নেমে সড়কপথে তিনি পৌঁছান যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে।
 

খদ্দরের পাঞ্জাবি ও গলায় উত্তরীয় পরিহিত মোদীকে ঘির এদিন  ছিল কড়া নিরাপত্তা। লালপাড়ের সাদা শাড়ি পরে স্থানীয় মহিলারা শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে মন্দির চত্বরে স্বাগত জানান তাকে। কৃষ্ণবর্ণ কষ্ঠিপাথরে নির্মিত মনোহর কালী মূর্তির পূজাঅর্চনা করেন মোদী।
 

সাতক্ষীরা জেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে পূজা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মন্দিরে তাঁকে সনাতন পদ্ধতিতে স্বাগত জানানো হয়। মন্দিরে প্রবেশের পর রীতি অনুযায়ী দেবীকে মুকুট পরিয়ে দেন  মোদী। এরপর দেবীর বস্ত্রদান সম্পন্ন করেন তিনি। দেবীকে মালা পরানোর পর যোগাসনে বসে পাঠ করেন পুজোর মন্ত্র। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর তিনি দেবীকে প্রদক্ষিণ করেন।

জানা যায় এই মন্দির ৫১ পীঠের অন্যতম জাগ্রত এক শক্তিপীঠ। তন্ত্রচূড়ামণি গ্রন্থে এই মন্দির সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'যশোরে পানিপদ্ম দেবতা যশোরেশ্বরী, চণ্ডশ্চ ভৈরব যত্র তত্র সিদ্ধ ন সংশয়।' অর্থাৎ এখানের সতীর হাতের তালু পতিত হয়েছিল এবং পীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম যশোরেশ্বরী। তাঁর ভৈরবের নাম 'চণ্ড'।

মন্দিরের গর্ভগৃহে বেদীতে বিরাদ করেন মা যশোরেশ্বরী। মখমলের আবরণে ডাকা পুরো শরীর। জাগ্রত দেবীর কেবল মুখমণ্ডল ভক্তরা দেখতে পান। শরীরের আর কোনও অংশই দেখা যায় না। 

মা এখানে ভীষণদর্শনা। রক্তাক্ত জিহ্বাটি আকৃতিতে বেশ বড়। মা যশোরেশ্বরীর নাকে বাম পাটায় পরানো আছে বড় নথ। মায়ের গলায় শোভা পায় রক্তজবার মালা ও সোনার হার। মাথায় মুকুট। 

প্রত্যেকদিন বহু ভক্তসামগম হয় এখানে। অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে ও তন্ত্রমতে মায়ের নিত্যপূজা হয়। প্রতিবছর কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে মা যশোরেশ্বরীর কালী মন্দিরে সাড়ম্বরে হয় শ্যামা মায়ের আরাধনা। 
 

যশোরেশ্বরী কালী মন্দির বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত মন্দির। এটি সাতক্ষীরা উপজেলার ঈশ্বরপুর গ্রামে অবস্থিত যশোরেশ্বরী কালী মন্দির। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র তীর্থস্থান। যশোরেশ্বরী শব্দের অর্থ যশোরের দেবী। এটি শক্তিপীঠ হিসাবে পরিচিত। মনে করা হয় প্রতাপাদিত্য কিংবা লক্ষণ সেনের সময়ের মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল। মন্দিরটি আনারি নামের এক ব্রাহ্মণ নির্মাণ করেন বলে লোকশ্রুতি রয়েছে।
 

পরবর্তী সময়ে মন্দিরটি সংস্কার করেন রাজা লক্ষ্মণ সেন। এই মন্দিরের সঙ্গে একসময় নাটমন্দির ও নহবতখানা ছিল। আজ সেগুলি অবশ্য রক্ষণবেক্ষণের অভাবে প্রায় বিলুপ্ত। তবে কমেনি যশোরেশ্বরীর মহিমা। যশোরের সুখ, সমৃদ্ধি ও আশা ভরসার প্রতীক হিসাবেই মনে করা হয় মা যশোরেশ্বরীকে। 

পরবর্তী সময়ে মন্দিরটি সংস্কার করেন রাজা লক্ষ্মণ সেন। এই মন্দিরের সঙ্গে একসময় নাটমন্দির ও নহবতখানা ছিল। আজ সেগুলি অবশ্য রক্ষণবেক্ষণের অভাবে প্রায় বিলুপ্ত। তবে কমেনি যশোরেশ্বরীর মহিমা। যশোরের সুখ, সমৃদ্ধি ও আশা ভরসার প্রতীক হিসাবেই মনে করা হয় মা যশোরেশ্বরীকে।