রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর বন্ধ রাষ্ট্রসংঘ, এনজিও, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন দেশ আপত্তি জানালেন তাতে গুরুত্ব দিচ্ছে না বাংলাদেশ সরকার। রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে গত ৪ ডিসেম্বর ভাসানচরে পাঠান হয়েছিল। এবার দ্বিতীয় দলটি পৌঁছল ভাসানচরে। জানা যাচ্ছে নৌবাহিনীর জাহাজে করে দ্বিতীয় দলটিকে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালির ভাসানচরে আনা হয়। এই দলে রয়েছেন চারশোরও বেশি পরিবারের প্রায় দুই হাজার সদস্য।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠাতে নৌবাহিনীর ৫টি জাহাজকে ব্যবহার করা হয়েছে। এদিকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল সমালোচনা করায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ সরকার। দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রক এনিয়ে বিবৃতি দিয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়াকে ঘিরে বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্য প্রচারে সরকার ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের ইতিবাচক উদ্দেশ্যকে প্রশংসা না করে কিছু মহল ভুল তথ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে চান। এ জন্য আমাদের গঠনমূলকভাবে কাজ করতে হবে। এখন মায়ানমারে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া জরুরি ভিত্তিতে শুরু করতে আন্তর্জাতিক মঞ্চ মায়ানমারের সাথে আলোচনা শুরু করুক।
এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গত ৪ ডিসেম্বর এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ৩০ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় এক হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচর স্থানান্তর করা হল। কক্সবাজারের ওপর জনবসতির চাপ কমাতেই সরকার এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা নিজ ইচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছেন বলেই দাবি করছে হাসিনা সরকার। এখানে শক্তি প্রয়োগ, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা টাকা দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার কোনো প্রশ্ন নেই বলেই দাবি প্রশাসনের।
ভাসানচর সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং মানুষ বসবাসের উপযোগী বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রকের বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে। ৩০ বছরের পুরনো এই দ্বীপে স্বাস্থ্যসেবা, খাবার, জল, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সবই রয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচলের জন্য দ্বীপে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ভাসানচর ও নোয়াখালীর মধ্যে নিয়মিত সি-ট্রাক সার্ভিস চালু করেছে। ছিমছাম ভাসানচের রোহিঙ্গারা আসায় এই দ্বীপের চিত্র একদম বদলে গিয়েছে, রোহিঙ্গাদের পদচারণে চরটি প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে বলেই দেখাতে চাইছে বাংলাদেশ সরকার। জানাযাচ্ছে চরটিকে বসবাসের উপযোগী করার নকশা তৈরি করেছে একটি ব্রিটিশ কোম্পানি। যুক্তরাজ্যের এইচ আর ওয়ালিংফোর্ড দ্বীপটি স্থিতিশীল কিনা সেটি পরীক্ষা করে এর উন্নয়ন নকশা প্রণয়ন করে। যার ভিত্তিতে ভাসানচরে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।