Muhammad Yunus Interim Govt Protests: মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিরোধী দল, সরকারি কর্মী, শিক্ষক এবং সেনাবাহিনীর অসন্তোষের মধ্যে প্রবল প্রতিবাদের মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর ক্ষমতার কেন্দ্রস্থলে সবধরনের জমায়েত, মিছিল ও সভা-সমাবেশের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
দৈনিক স্টার-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার ডিএমপি অনির্দিষ্টকালের জন্য জামুনা গেস্ট হাউস (ইউনুসের সরকারি বাসভবন), বাংলাদেশ সচিবালয় এবং তার আশেপাশের এলাকা ঘিরে বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউনুস সরকারের এক অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার সচিবালয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা সরকারি কর্মীদের আন্দোলনের মধ্যে এই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ওই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, অনিয়মের অভিযোগে ১৪ দিনের মধ্যে কোনও তদন্ত ছাড়াই কর্মী বরখাস্ত করা যাবে।
সরকারি কর্মীরা এই অধ্যাদেশকে "অবৈধ কালো আইন" বলে অভিহিত করেছেন এবং এর অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। বিডি২৪নিউজ জানিয়েছে, ডিএমপি কমিশনার এস এম সাজ্জাদ আলী বলেছেন, "প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলার স্বার্থে" মধ্য ঢাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এর আগেও ১০ মে একই ধরনের নির্দেশনা জারি হয়েছিল, যখন অন্তর্বর্তী সরকার বিজিবি ও পুলিশের সোয়াট ইউনিটসহ আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছিল। ঢাকাভিত্তিক নিউএজবিডি জানিয়েছে, আপাতত ঈদের কারণে প্রতিবাদের তীব্রতা কিছুটা কমেছে, তবে ১৫ জুনের মধ্যে দাবি না মানা হলে আরও বড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সরকারি কর্মীরা।
৮ আগস্ট, ২০২৪ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ ও সংকটের মুখে পড়েছে। ইউনুস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্যাপক বিচারবিভাগীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে একটি অবাধ নির্বাচন আয়োজনের। তবে নির্বাচনের এই ঘোষণা ঘিরে সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, ইউনুস হয়তো নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছেন।
একটি নির্দিষ্ট নির্বাচন সময়সূচির দাবিতে বড় মাপের আন্দোলন চালাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীও ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। প্রথম আলো জানিয়েছে, সেনাবাহিনী ও বিএনপির বিরোধিতার পাশাপাশি ২৭ মে বিক্ষুব্ধ সরকারি কর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি না মানা হলে তাঁদের আন্দোলন সারা দেশের সরকারি অফিসে ছড়িয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ সচিবালয় অফিসার্স-এমপ্লয়িজ ইউনিটি ফোরামের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেছেন, ভবিষ্যতে আন্দোলন আরও জোরালো হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই সারা বাংলাদেশের হাজার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যোগ দেন, তাঁদের প্রধান দাবি ছিল বেতন বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যা সমাধান।
আপাতত ঈদের ছুটির সময় বাংলাদেশে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত মনে হলেও, ছুটি শেষে আন্দোলন আবারও তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে অসন্তোষ ও প্রতিবাদের তীব্রতা বাড়তে থাকায় ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমেই জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়ছে। প্রতিটি দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে ইউনুস জনআস্থাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন এবং বাংলাদেশের আগেই ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিভাজন আরও বাড়াচ্ছেন।