মৃত্যু পথযাত্রী প্রেমিকা, হাসপাতালেই বিয়ে করে নজির যুবকের

বর্তমানে দীর্ঘদিন প্রেম ও মেলমেশা করার পর বিয়ে করতে অনীহা রয়েছে অনেক যুবকরে। এমনকি বিয়ের প্রতিশ্রুত দিয়ে সহবাসের খবর আকছার শোনা যায়। আর এই ক্ষয়ে যাওয়া মূল্যবোধের সমাজেই নতুন নজির গড়লেন বাংলাদেশের যুবক মাহমুদুল হাসান। ক্যান্সার আক্রান্ত শয্যাশায়ী প্রেমিকাকে হাসপাতালেই বিয়ে করলেন এই যুবক।

Advertisement
মৃত্যু পথযাত্রী প্রেমিকা, হাসপাতালেই বিয়ে করে নজির যুবকেরমৃত্যুর পথযাত্রী ক্যান্সার আক্রান্ত প্রেমিকাকে হাসপাতালে বিয়ে
হাইলাইটস
  • ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ফাহমিদা
  • তার জীবন সংকটাপন্ন জেনেও হাল ছাড়েননি প্রেমিক  হাসান
  • উল্টে ভালবাসার এক নতুন দৃষ্টান্ত গড়লেন তিনি

বর্তমানে দীর্ঘদিন প্রেম ও মেলমেশা করার পর বিয়ে করতে অনীহা রয়েছে অনেক যুবকরে। এমনকি বিয়ের প্রতিশ্রুত দিয়ে সহবাসের খবর আকছার শোনা যায়। আর এই ক্ষয়ে যাওয়া মূল্যবোধের সমাজেই নতুন নজির গড়লেন বাংলাদেশের যুবক মাহমুদুল হাসান। ক্যান্সার আক্রান্ত শয্যাশায়ী প্রেমিকাকে হাসপাতালেই বিয়ে করলেন এই যুবক। 

ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ফাহমিদা। তার জীবন সংকটাপন্ন জেনেও হাল ছাড়েননি প্রেমিক  হাসান। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার যুবক হাসান প্রেমিকাকে নিয়ে সুখী জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। ফাহমিদা মারণ ক্যান্সারে আক্রান্ত জেনেও পিছিয়ে আসেননি তিনি। উল্টে ভালবাসার এক নতুন দৃষ্টান্ত গড়লেন তিনি। 

প্রেম-ভালোবাসার বহু গল্পই আমরা ইতিহাসে পেয়েছি। এবার তাতে যুক্ত হলেন ফামহিদা ও হাসানও। গত ৯ মার্চ  হাসপাতালের বেডে  ভালোবাসার অমর উপাখ্যান রচনা করলেন এই দুই যুবক-যুবতী। বাংলাদেশের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ছেলে মাহমুদুল হাসান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের দক্ষিণ বাকলিয়ার মেয়ে ফাহমিদা কামাল ইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেন। 

 

 

শিক্ষাজীবনেই  দুজনের পরিচয়। স্মার্ট সুন্দরী তরুণী ফাহমিদার প্রেমে পড়তে বেশি সময় লাগেনি হাসানের। এর পর আস্তে আস্তে সম্পর্ক গাঢ় হয়। বিয়ে ,সংসার কত না মধুর স্বপ্ন একসঙ্গে দেখেছিলেন দুজনে।  কিন্তু একি! এমন স্বপ্ন সুখের মাঝেই হঠাৎ কালো মেঘ ঘনায়। ফাহমিদার শরীরে বাসা বাঁধে  ক্যান্সার। ধরা পরার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ভাল  চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার, পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে আনা হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দেয়, ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়।  ইঙ্গিত দেয়, পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আর নেই।পাথরচাপা কষ্ট নিয়ে পরিবারের লোকজন ২০ বছর বয়সী ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করান। সেখানে চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শারীরিক অবস্থার অবনতির দিকে  যাচ্ছিল। 

Advertisement

প্রেয়সী ফাহমিদার অসহ্য কষ্ট ও যন্ত্রণা প্রেমিক হাসানের আর সহ্য হয়নি। ফাহমিদার কষ্ট হাসান ভাগ করে নিতে চায়। চোখের জল মুছিয়ে দিতে চায়, কপালে হাত রেখে বলতে চায়, আমি আগের মতো এখনো তোমার পাশে আছি। হাতে হাত রেখে বলতে চায়, আমি তোমাকে বড্ড ভালোবাসি। তুমিই আমার জীবন, তুমিই আমার সব। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াতে চায়। বুকে জড়িয়ে নিয়ে কষ্টগুলো নিজের করে নিতে চায়। কিন্তু তা কী করে সম্ভব! হাসান ফাহমিদার প্রেমিক হলেও সমাজের চোখে পরপুরুষ। মৃত্যুযন্ত্রণায় ফাহমিদা নিঃশেষ হচ্ছেন দিনেদিনে। তার জীবন প্রদীপ প্রায়ই শেষের দিকে। এবার হাসান কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ফাহমিদাকে যদি মরতে হয়, তাহলে তার বুকে মাথা রেখেই মরতে হবে। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দেন ফাহমিদাকে বিয়ে করার। মৃত্যু পথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের এই বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই তখন  হতবিহ্বল। হাসানকে বোঝানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অটল।

অবশেষে উভয় পরিবার সম্মত হয়। বিষয়টি জানানো হয় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে অপলক তাকিয়ে থাকে সে  হাসানের দিকে। ফাহমিদার মুখে ফুটে উঠে নির্মল স্বর্গীয় হাসি। অবশেষে শুরু হয় বিয়ের প্রস্তুতি। গত ৯ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম  মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসানকে হাজির হন পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। দুজনে মিলে কেক কাটেন, মালা বদল হয়।  ক্ষণিকের জন্য মরণঘাতী ক্যান্সারকে জয় করে ফাহমিদা যেন হয়ে ওঠেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে। সমস্ত স্বর্গীয় সুখ তাকে ঘিরে রাখে। হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিনগুলো আবার যেন ফিরে পায়ন। আনন্দে আত্মহারা ফাহমিদার আরো বাঁচতে ইচ্ছে করে। হাসান আর ফাহমিদার এই অমর প্রেমকাব্যে ভালবাসারই  জয় হলো। জীবন ক্ষনিকের, জীবনের কাছে প্রেম অবিনশ্বর।

POST A COMMENT
Advertisement