scorecardresearch
 

সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন, ঢাকার এই গুরুদ্বারে পা পড়েছিল স্বয়ং নানকের

বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই মুসলিম ধর্মাবলম্বী। তাই বাংলাদেশ সংবিধানে ইসলামকে রাশষ্টীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহওম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশ। তবে ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে কিন্তু ছড়িয়ে রয়েছে সম্প্রীতির নির্দশন। এই দেশে যেমন হিন্দুদের বিখ্যাত সব মন্দির রয়েছে তেমনি রয়েছে ১০টি গুরুদুয়ারারা। তার মধ্যে অন্যতম গুরুদুয়ারা নানকশাহী। শোনা যায় এই গুরুদুয়ারের এসেছিলেন স্বয়ং নানক।

Advertisement
গুরুদুয়ারা নানকশাহী গুরুদুয়ারা নানকশাহী
হাইলাইটস
  • ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে কিন্তু ছড়িয়ে রয়েছে সম্প্রীতির নির্দশন
  • এই দেশে যেমন হিন্দুদের বিখ্যাত সব মন্দির রয়েছে তেমনি রয়েছে গুরুদুয়ারারা
  • তার মধ্যে অন্যতম গুরুদুয়ারা নানকশাহী

বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই মুসলিম ধর্মাবলম্বী। তাই বাংলাদেশ সংবিধানে ইসলামকে রাশষ্টীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহওম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশ। তবে ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে কিন্তু ছড়িয়ে রয়েছে সম্প্রীতির নির্দশন। এই দেশে যেমন হিন্দুদের বিখ্যাত সব মন্দির রয়েছে তেমনি রয়েছে  ১০টি গুরুদুয়ারারা। তার মধ্যে অন্যতম গুরুদুয়ারা নানকশাহী। শোনা যায় এই গুরুদুয়ারের এসেছিলেন স্বয়ং নানক। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও অনেক ঐতিহাসিক ঘটনারও সাক্ষী এই ভবন। আজ অজানা বাংলাদেশে আমরা জানবো গুরুদুয়ারা নানকশাহীর সেই ইতিহাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কলাভবনের পাশে ঢাকার গুরুদুয়ারা নানকশাহী(Gurdwara Nanak Shahi) অবস্থিত। শুধু ধর্মীয় বিবেচনায় নয়, ঐতিহাসিকভাবেও গুরুদুয়ারা নানকশাহীর গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে বিদ্যমান গুরুদুয়ারাগুলির মধ্যে এটির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। প্রতি সপ্তাহেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে শিখ ধর্মের অনুসারীরা এখানে জমায়েত হন এবং প্রার্থনা করেন। বাংলাদেশে শিখদের সবচেয়ে বড় জমায়েত হয় এখানেই। তবে করোনাকালে চেনা চিত্রটা এখন বদলেছে।

কথিত আছে যে, ঢাকার এই গুরুদুয়ারাটি যেখানে অবস্থিত, সেই স্থানে ষোড়শ শতকে শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক অল্প সময়ের জন্য অবস্থান করেছিলেন। এখানে  থাকা কালীন তিনি শিখ ধর্মের একেশ্বরবাদ এবং ভ্রাতৃত্ববোধের কথা প্রচার করেন এবং ধর্মের আচার অনুষ্ঠান পালনের শিক্ষা প্রদান করেন। শিখ ধর্মের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ সিং-এর সময়কালে (১৫৯৫-১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ) ভাইনাথ (মতান্তরে আলমাস্ত) নামের জনৈক শিখ ধর্ম প্রচারক গুরুদুয়ারাটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কারো কারো মতে, গুরুদুয়ারাটি নির্মাণের কাজ শুরু হয় নবম শিখগুরু তেগ বাহাদুর সিং এর সময়কালে (১৬২১-১৬৭৫ খ্রিষ্টাব্দে)। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়। পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি ভগ্নদশা প্রাপ্ত হয়।

ইতিহাস বলে, ১৪৯৯ খ্রিষ্টাব্দে শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক নিজ ধর্মমত প্রচারের জন্য ঢাকা আসেন নানা পথ ঘুরে। ইনি মিথিলা থেকে দিনাজপুরে এসে কান্তজীর মন্দির পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি কামরূপ ঘুরে সিলেটে যান। এরপর সিলেট থেকে তিন ঢাকাতে আসেন নৌপথে। উত্তর ঢাকার শিবপুরে (বর্তমান রায়ের বাজার, ধানমণ্ডি এলাকার কোনো এক স্থানে) নৌকা থেকে অবতরণ করেন। পরে তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যান। শিবপুরের মানুষের পানীয় জলের অভাব দূর করার জন্য সে সময়ের শিবপুর গ্রামের জাফরাবাদ এলাকায় একটি কূপ খনন করিয়েছিলেন। পরে সেখানে বিদেশি অতিথিদের স্নানের সুবিধার্থে এক স্থানীয় শাসক পুকুর খনন করিয়েছিলেন। ১৯৫৯ অবধি সে কূপটি স্থানীয় শিখরা দেখভাল করতেন। পরে আবাসন প্রকল্পের জন্য সরকার জমি বণ্টন করে দিলে পুকুরটি ভরাট করা হয়। কথিত আছে নানকের এই কুয়াটি বর্তমানে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ২৬ নং সড়কের ২৭৮ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত। তিনি ঢাকার নীলক্ষেত (তৎকালীন সুজাতপুর মৌজার অন্তর্গত ছিল) অঞ্চলে একটি মাঞ্জি প্রতিষ্ঠা করে ধর্মীয় উপদেশ দেন।  পাঞ্জাবি শব্দ মাঞ্জি-র অর্থ হলো— আধ্যাত্মিক আলোচনার কেন্দ্র। পরে এটাই নানকশাহী গুরুদুয়ারা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

Advertisement

বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ১৯৭২ সালে গুরুদুয়ারাটির ভবনের কিছু সংস্কার করা হয়। ১৯৮৮-৮৯ সালে এটির ব্যাপক সংস্কার সাধন করা হয়, এবং বাইরের বারান্দা ও সংলগ্ন স্থাপনা যোগ করা হয়। সংস্কার কার্যের অর্থায়ন করা হয় বাংলাদেশে ও বিদেশে অবস্থানরত শিখ ধর্মাবলম্বীদের দানের মাধ্যমে। ঢাকার আন্তর্জাতিক পাট সংস্থার তদানিন্তন প্রধান সর্দার হরবংশ সিং এর নির্মাণকার্য তদারক করেন। গুরুদুয়ারায় কারও প্রবেশে বাধা নেই, জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সব বয়সী নারী ও পুরুষ এখানে প্রবেশ, প্রার্থনায় অংশগ্রহণ এবং প্রসাদ পেতে পারেন। ঢাকায় বসবাসরত শিখ সম্প্রদায়ের লোকজন নিয়মিত এই গুরুদুয়ারায় আসেন। তা ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনকেও শুক্রবার এই উপাসনালয়ে আসতে দেখা যায়। স্থানীয় ভক্ত ও বিদেশি দাতাদের সাহায্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় নির্বাহ হয়।

 

Advertisement