বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। আগামী বছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি হতে চলেছে। আর স্বাধীনতার এই অর্ধশতাব্দী উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানাল হল। দুই দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে ঢাকায় উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর আগে চলতি বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীকে। কিন্তু সেবার করোনা পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাওয়ায় শেষমুহূর্তে সেই সফর বাতিল করতে হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। তবে এবার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে ২৬ মার্চ ঢাকায় হাজির থাকবেন মোদী। তার আগেই অবশ্য দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসতে চলেছেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর এই ভার্চুয়াল বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে।
আগামী মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভার্চুয়াল সামিট হবে বলে জানা গিয়েছে। এই সামিটেই অংশগ্রহণ করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এই বৈঠকে চারটি সমঝোতা চুক্তি সই হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ড. মোমেন জানান, বাংলাদেশ-ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে চারটি চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি চলছে। তবে চুক্তিগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া ভারতীয় ক্রেডিট লাইনের আওতায় সম্পন্ন হওয়া বেশ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন হতে পারে। আগামী ১৬ অথবা ১৭ ডিসেম্বর ভার্চ্যুয়াল ভাবে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী জানান, বাংলাদেশে এই বছর মুজিববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। একই সঙ্গে আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে বলে আমরা আশা করছি। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এছাড়া আসন্ন বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠানের কার্যক্রম চলছে। এসব কাজের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ও সফর সামনে রেখে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন দিল্লি যাচ্ছেন। তিনি নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। বৈঠকে তাদের মধ্যে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর জলবন্টন, বাণিজ্য, রেল যোগাযোগ, করোনাভাইরাসের টিকাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবার কথা রয়েছে।
গত মে থেকে লাদাখ নিয়ে চিনের সঙ্গে ভারতের চাপা উত্তেজনা রয়েছে। দিল্লিকে কোণঠাসা করতে ভারতের একের পর এক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দিকে হাত বাড়িয়েছে চিন। বাংলাদেশের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন জিনপিং। এই অবস্থায় বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে তৎপর দিল্লিও। তবে চলতি বছরে সিএএ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সেই ভুল বোঝাবুঝি মেটাতে মাস কয়েক আগে নিজেই ঢাকায় যান ভারতের বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এবার পারস্পরিক সম্পর্ক আরও দঢ় করতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজন করা হচ্ছে ‘জয়েন্ট কনসাল্টেটেটিভ কমিশন’। যেখানে স্বয়ং অংশ নেবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।