গোটা বিশ্বেই মুসলিমরা রমজান মাসকে সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করেন। রমজান মাসে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস পালন করেন। এই এক মাস সারাদিন রোজা পালন করার পর সূর্যাস্তের পর ইফতার ও সূর্যোদয়ের আগে শেহরি পালন করে থাকেন মুসলিমরা। এই বছর ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুসারে ২২ মার্চ থেকে শুরু হতে চলেছে রমজান মাস। ২১ এপ্রিল পর্যন্ত রোজা পালন করবেন মুসলিমরা। তারপর ২২ বা ২৩ এপ্রিল ঈদ-উল-ফিতরের উত্সবে মেতে উঠবে গোটা বিশ্বের মুসলিম সমাজ। বাংলাদেশের প্রধান উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। আর তার আগে রোজার ইফতারে ছোলার চাহিদা বাড়বে সেদেশে। বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার রেকর্ড পরিমাণ ছোলা এসেছে ভারত থেকে। এবার রোজার বাজারে যত ছোলা বেচাকেনা হচ্ছে, তার ৪৪ শতাংশই গিয়েছে ভারত থেকে। বাংলাদেশে ছোলা আমদানির মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ভারত।
প্রসঙ্গত এক বছর আগেও ইফতারে অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ছাড়া বিকল্প ছিল না বাংলাদেশে। কারণ, দেশটি থেকেই আমদানি হয়েছিল সব ছোলা। এবার অস্ট্রেলিয়ার ছোলার সঙ্গে ইফতারের টেবিলে উঠবে ভারতের ছোলাও। ভারত বিশ্বের শীর্ষ ছোলা উৎপাদনকারী দেশ। রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে, ২০২১ সালে ভারতে ১ কোটি ১৯ লাখ টন ছোলা উৎপাদন করেছে। তবে ভারতে চাহিদা বেশি থাকায় সাধারণত ছোলা কম রফতানি হয়ে থাকে। কিছু পরিমাণ কাবলি ছোলা রফতানি হয়ে থাকে। উল্টো দেশের চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হয় দিল্লিকে। কিন্তু এবার ফলন ভালো হওয়ায় ভারত সাধারণ ছোলাও রফতানি করছে। বেনাপোল, বাংলাবান্ধা, সোনামসজিদ ও হিলি স্থলবন্দর দিয়েই বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৬৯ হাজার টন ছোলা।
ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ ছোলা যাচ্ছে বাংলাদেশে। রমজান উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেসব পণ্যের সরবরাহে আর কোন ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছে সেদেশের জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, রমজান মাসের পরেও এসব পণ্যের কোন ঘাটতি হবে না। পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন যে, রোজায় চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের ব্যাপক সরবরাহ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু পণ্যের দামও কমেছে। আমদানিকারকরা অবশ্য বলছেন যে, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডলার সংকট এবং এলসি খোলার বিষয়ে এখনো কিছু কিছু সমস্যার মুখে পড়ছেন তারা।
রমজান মাসে বাংলাদেশে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খেজুর, ছোলা, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ ইত্যাদি। এরমধ্যে চাল, গম, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও চিনি—শেষ পর্যন্ত এই ছয় পণ্য আমদানিতে ভারতের কাছে কোটা চেয়েছে বাংলাদেশ। বছরে মোট ৫২ লাখ ৫০ হাজার টন পণ্য আমদানিতে কোটা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টন হবে গম। ভারতের পক্ষ থেকে কোটা সুবিধা দেওয়া অবশ্য নতুন কিছু নয়। দিল্লি এর আগে প্রতিবেশী ভুটান ও মালদ্বীপকে এ ধরনের কোটা দিয়ে এসেছে।